লিবিয়ায় আটক মাদারীপুরের ২৮ যুবক, জড়িত জনপ্রতিনিধি
কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রা। এবার লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক মাদারীপুরের কালকিনির ২৮ যুবক। তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। এই ঘটনায় জড়িত খোঁদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অবৈধ পথে ওই সব যুবকদের বিদেশে পাঠানোর। মুক্তি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লিবিয়ার বন্দিশালায় আটকদের পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সন্তানদের ফিরে পেতে পরিবারগুলো আকুতি জানাচ্ছে প্রশাসনের কাছে। তবে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। যদিও কালকিনি উপজেলা প্রশাসন বলছে, অভিযোগ পেলে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্তান কেমন আছেন জানেন না বাবা মোক্তার বেপারী ও মা রেহানা বেগম। ১৫ দিন আগে মুঠোফোনে কথা হলেও দালালদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় খোঁজ নেই তাদের ছেলে সাগরের।
একই অবস্থা মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের বনি সরদার, ফয়সাল ঘরামী, হাসান সরদার, মেহেদী বেপারী, আহাদ সরদার, এনামুল ঘরামীসহ বেশ কয়েকজন যুবকের।
স্বজনরা জানায়, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বরের মাধ্যমে জনপ্রতি ৯ লাখ টাকায় অবৈধভাবে ইতালীয় যাবার জন্য ৪ মাস আগে রওয়ানা দেন ২৮ যুবক। লিবিয়ায় আটক যুবকদের মুক্ত করার কথা বলে দফায় দফায় আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। তবুও মিলছে না মুক্তি। এই ঘটনার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। চেয়ারম্যান প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এ ব্যাপারে ডাসার থানায় মামলা করতে গেলে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয় পুলিশ।
পরিচয় গোপন করার শর্তে ভুক্তভোগী একাধিক পরিবারের সদস্যরা বলেন, চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছিল ৯ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালী পৌঁছে দিবেন। তখন প্রলোভনও দিয়েছিলেন। তার কথায় বিশ্বাস করেই আমাদের সন্তান লিবিয়ায় হয়ে ইতালী পাঠাই। এখন ছেলেদের মধ্যে কেউ কেউ বন্দিশালায় আটক রয়েছে। আবার অনেকের খোঁজই নেই। এই ঘটনার বিচার চাই এবং আমাদের সন্তাদের ফেরত চাই।
এরই মধ্যে টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় লাখ লাখ গুনে নিচ্ছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে জানতে ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার গিয়েও চেয়ারম্যানকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর বলেন, এ ঘটনায় রাসেল, সরোয়ার, ফারুক নামে বেশ কয়েকজন দালাল জড়িত। আমি এর সাথে সংশ্লিষ্ট নই। যদি কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকেন তাহলে সে মিথ্যা বলছেন।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকর তঞ্চ্যাঙ্গা বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএফ/