ইউটিউব দেখে পেয়ারা চাষে সফল ১৪ তরুণ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুব সমাজ অপব্যবহার করলেও অনেকে আবার ভালো দিকটাও বেঁছে নিয়েছে। ইউটিউব দেখে এমনই এক ব্যতিক্রম ঘটনার জন্ম দিলো দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ১৪ জন যুবক। তাদের এই কার্যক্রমে এলাকায় ব্যাপক সারা ফেলেছে।
বেকারত্বের পাশাপাশি কৃষিতে পরিবর্তন আনতে এগিয়ে এসেছেন অনার্স-মাস্টাস পাশ করা এসব যুবক। এদের মধ্যে কেউ চাকরি করছেন আবার কেউ চাকরির পিছনে ছুঁটেও লাভ হয়নি। তাই চাকরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে ১৪ জন যুবক মিলে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন থাই পেয়ারা। আবহাওয়া অনুকুল ও সঠিক পরিচর্চা করার ফলে বাম্পার ফলন হওয়ায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তি শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী এলাকায় পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাড়ে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেছেন পেয়ারা চাষ। নিজেদের এগিয়ে নিতে গত বছরের জুন থেকে বানিজ্যিকভাবে গোল্ডেন সুপার-৮জাতের থাই পেয়ারা চাষ শুরু করেন। সেই সাথে পেয়ারা চাষে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন ১৪ তরুণ উদ্যোক্তা। এই ১৪ তরুণ উদ্যোক্তা পেয়ারা চাষ করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে রপ্তানির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন বুনছেন। মাত্র ৯ মাসের মাথায় গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাগানের পেয়ারা প্রায় ২ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পেরে বেকারত্বের অবসান ঘটবে বলে তাদের আশা। এই ১৪ বন্ধুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই-সংগ্রাম দেখে আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়রা মনে করছেন আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই তাদের লালিত স্বপ্ন পুরণ করতে পারবেন।
উদ্যোমী এই ১৪ তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন, জামাল হোসেন মন্ডল রুবেল, মাসুদ রানা, জালাল উদ্দিন, সাজ্জাদ আলম টিংকু, মোস্তাফিজার রহমান বাবু, সুমন শেখ, হারুণ-অর-রশিদ, আলমেরী হাসান সবুজ, কামরুজ্জামান মুরাত, আকরাম হোসেন, কামাল হোসেন মন্ডল, ইমান হোসেন, সেলিম রেজা ও ফারজানা ইসলাম নাবিলা।
পেয়ারা বাগানে পরিচর্চা শ্রমিক ওবাইদুল হক ও মমিনুল ইসলাম বলেন, এই ১৪ বন্ধু সবাই শিক্ষিত বেকার যুবক এবং সবাই বিএ ও মাস্টাস পাশ করেছে। কয়েক জনের চাকুরি হয়েছে। বাকি যুবকরাও চাকুরির পিছনে ছুঁটেও চাকুরি না হওয়ায় তারা ১৪ জন বন্ধু মিলে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। আমরা তাদের বাগানে শুরু থেকে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তাদের উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করছি।
জমির মালিক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব জানান, একদিন ১৪ বন্ধ আমার সাড়ে ১০ বিঘা জমি লিজ নেওয়ার জন্য আমার বাড়িতে আসেন। তারা সবাই মিলে পেয়ারার চাষ করবে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। তারা এই কঠিক কাজটা করতে পারবে। এদের মধ্যে কয়েক জনের চাকুরি হয়েছে। বাকি সবাই শিক্ষিত বেকার যুবক। বেকারের কষ্টটা আমি বুঝি। তাই পাঁচ বছরের জন্য জমি লিজ দিয়েছি। গত ৯ মাস ১৪ যুবক যেভাবে স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করেছে। তাদের লড়াইটা সঠিক ছিল বলে এখন তারা সাফল্যের পথে। আশা করছি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবেই।
ফ্রেন্ডস এ্যাগ্রো সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মন্ডল রুবেল জানান, চাকুরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে ১৪ বন্ধুর ভাগ্য উন্নয়ণের লক্ষ্যে নাটোরের ঝিনাইদাহ থেকে গোল্ডেন সুপার-৮ জাতের ৩ হাজার ৭০০ পেয়ারার চারা সংগ্রহ করে গত বছরের ২৮ জুন বানিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ শুরু করেছি। সাড়ে ১০ বিঘা জমি লিজ, পেয়ারা চারা ক্রয়, জমিতে বেড়া দেওয়া ও অন্যান্য বাবদসহ সব মিলে এ যাবদ পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের পেয়ারা বাগানে প্রতিদিনেই পরিচর্চায় চার থেকে পাঁচ জন শ্রমিক কাজ করেন। চারা রোপণের ৫ মাসের মাথায় ফল আসে। মাত্র ৯ মাসের মাথায় গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাগানের পেয়ারা ১৮ থেকে ২ হাজার টাকা মনে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরে বেকারত্বের অবসান ঘটবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আশা করছি প্রতি বছর বাগানের পেয়ারা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো এবং খরচ বাদে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হবে। এই দুই তরুণ উদ্যোক্তা আরও জানান, এখন থেকে বেকার যুবক-যুবতিরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই উদ্যোক্তা হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও সচ্ছলতা ফিরে আসবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী এলাকায় ফ্রেন্ডস অ্যাগ্রো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৪ বন্ধু মিলে থাই পেয়ারা চাষ করেছে, বিষয়টি জানি। তবে এখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তারপরও কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের পাশে থাকবে এবং তাদেরকে সব ধরণের সহযোগী করা হবে। এই তরুণ উদ্যোক্তারা পেয়ারা চাষের মাধ্যমে বেকারত্বের পাশাপাশি কৃষিতে সাফল্য নিয়ে আসায় এ উপজেলা এখন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।