চাপতি হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল ৫ হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান
সবুজ রঙের কাঁচা ধান পেকে সোনালী আভা ধারণ করতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগতো। কিন্তু এর মধ্যেই ভারতের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বৃহত্তর হাওড় চাপতির বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটেছে।
চাপতি হাওরের বৈশাখী এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধটি রাত ২ টার দিকে বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢলের পানি ঢুকতে থাকে। এতে তলিয়ে যায় হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান।
এ দিকে সুনামগঞ্জে গত দুই দিন কোনো বৃষ্টি হয়নি। কড়া রোদ ছিল। তারপরও হাওর এলাকার নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মূলত উজানের ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছেই। তবে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। বেড়েছে জেলার জাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, পাটলাই, নলজুর, কালনি, চলতি, ধারাইন, চেলা, কংসসহ অন্যান্য নদ–নদীর পানি।
সুনামগঞ্জে হাওরে একের পর এক বাঁধ ভাঙছে, ডুবছে কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান। গত ১ সপ্তাহে অন্তত ১০টি হাওরে ফসলহানি ঘটেছে।
কৃষকরা জানান, বুধবার সকাল থেকেই বাঁধ চুইয়ে পানি হাওরে প্রবেশ করছিল। পিআইসি সদস্যদের বারবার ব্যবস্থা নিতে বলার পরও তারা বাঁধ রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
আজ সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাওর তীরবর্তী অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক ফসল হারিয়ে বিলাপ করছেন। চোখের সামনে জমি ডুবে যেতে দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। গতকাল যেখানে ছিল হাওরভরা সবুজ ফসলের সমারোহ। আজ সেখানে অথৈ পানি।
হাওরের কৃষকেরা বলছেন, তারা ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। কারণ, এখনো হাওরে ধান পাকতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে। ২০১৭ সালে এই সময়েই হাওরের সব কাঁচা ধান তলিয়ে গিয়েছিল। যদি ঢল নামা অব্যাহত থাকে, তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব বাঁধ দিয়েছে, তাতে ফসল রক্ষা হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা বলছেন, উজানের (ভারতের চেরাপুঞ্জি) বৃষ্টিই ভয়ের মূল কারণ। সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ঢল নামছে। এতেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তাসহ সবাই মাঠে আছেন। যেখানে যা যা প্রয়োজন, ফসল রক্ষা স্বার্থে সব করা হবে।
দিরাই উপজেলার দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা বলেন, ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও হাওরে ঘুরে দেখেছি। বাঁধটি দুর্বল ছিল। দুরমুজ করে নাই। লিকেজ দিয়ে পানি প্রবেশ করে একপর্যায়ে বাঁধটি ভেঙে যায়। ওই হাওরে ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি ছিল। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, প্রথম শ্রেণির ২২ জন ঠিকাদারকে তাদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। হাওরের বাঁধের কাজে অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।
মন্ত্রী আরও তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে হাওরে যেহেতু ফসল ডুবে গেছে সেজন্য আমরা রোববার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। সেই কমিটি সুনামগঞ্জে এসে সুষ্ঠু তদন্ত করবে। সেই তদন্ত অনুযায়ী হাওরের বাঁধের কাজে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিংবা পিআইসির কেউ অনিয়মে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।