রংপুরের চার নারী ফুটবলার প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিলে যাচ্ছেন
ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিল যাচ্ছেন রংপুর সদর উপজেলার ৪ নারী ফুটবলার ও লিয়ন প্রধান (১৭)। এই কৃতি খেলোয়াড়রা আগামী মে মাসে দুই মাসের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ব্রাজিল যাবেন। গত ৪ এপ্রিল ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে খেলোয়াড়দের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২১ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রতিভাবান ৪০ খেলোয়াড়ের বিকেএসপিতে দুই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ থেকে ব্রাজিলে অধিকতর উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ১১ জনকে বাছাই করা হয়। এদের মধ্যে ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলা পীরগঞ্জের লিয়ন প্রধান রয়েছেন। এই ১১ জনের পাশাপাশি আরও ৪ জন খেলোয়াড়কে অতিরিক্ত হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য এসব খেলোয়াড়রা মে মাসের শেষদিকে ব্রাজিলে যাবেন।
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিনী ইউনিয়নের চার নারী ফুটবলার বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হওয়ায় আনন্দে দিশেহারা গ্রামবাসী। নারী ফুটবলের গ্রামখ্যাত এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, সদ্যপুস্কুরিনীর মেয়েরা ফুটবলে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতেও অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে। সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাব বাংলাদেশ নারী লীগে খেলেছে। পর্তুগালে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টিও আরেকটি বড় সাফল্য।
রংপুরের নারী ফুটবলার শিলা আক্তারের বাবা গোলজার হোসেন ভীষণ আনন্দিত। অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আমার মেয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে জায়গা পেয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি যে কী খুশি, তা বলে বোঝাতে পারব না।
আরেক অভিভাবক রেজ্জাক আলী বলেন, মুই বিশ্বাস করব্যার পারোছো না, মোর বেটি ঢাকাত খেলবার গেইছে। ফির স্যাটে থাকি বিদেশোতও যাবার সুযোগ পাইছে। গ্রামোত ক্লাব না থাকলে এত কিছু হইল না হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবু তৈয়ব আরিফের পৃষ্টপোষকতায় সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের চিত্র পাল্টে গেছে। ক্লাবটি ২০২০ সাল থেকে আলোর মুখ দেখা শুরু করে। এই সাবেক এসপি দুই নারী ফুটবলার নাছরিন আক্তার ও রুমি আক্তারকে লিগামেন্ট অপারেশন (পায়ের অস্ত্রোপচার) করিয়ে খেলোয়াড় জীবন পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন সেই নাছরিনসহ চার ফুটবলার ইউরোপীয় দেশ পাড়ি দেবার অপেক্ষায়।
সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও ফুটবল প্রশিক্ষক মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সফলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য এই ক্লাবের মাধ্যমে দেশে ভালমানের খেলোয়াড় তৈরিতে ভূমিকা রাখা। সেই চেষ্টা নিয়েই দীর্ঘদিন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক সবসময় খোঁজখবর রাখেন। জেলা পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু স্পন্সরের অভাবে বাস্তবায়ন করাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির লিয়ন প্রধান আগামী মে মাসে দুই মাসের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ব্রাজিল যাবেন। লিয়ন বিকেএসপির শিক্ষার্থী। তিনি পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা দিনমজুর রফিকুল ইসলাম ও মা খাদিজা বেগম। পীরগঞ্জ পৌর এলাকার ধনশালা গ্রামে থাকেন লিয়নের পরিবার।
দিনমজুর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, থাকার জায়গাটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জমি জমা নেই। সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করি। আমার দুই ছেলে-মেয়ে। তাদের কোনো ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারিনি। ছেলেটা একটা বাইসাইকেল কিনে চেয়েছিল। কিন্তু অভাবের কারণে সেটাও দিতে পারিনি। পায়ে হেঁটেই কষ্ট করে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে। ওর লেখাপড়ার খরচ কষ্ট করে চালাচ্ছি। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা এই ছেলে ফুটবল খেলার জন্য বিদেশে ব্রাজিল যাচ্ছে। এটা শোনার পর আনন্দে আমার বুক ভরে গেছে।
পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক মাহমুদুল হাসান সোহেল বলেন, ফুটবল খেলাকে ধরে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের একাডেমির ক্ষুদে খেলোয়াড়দের লিয়ন বিকেএসপিতেও ভর্তি হয়েছে। সে ভীষণ ভালো খেলে, বিশেষ করেফরোয়ার্ড পজিশনে দুর্দান্ত। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিলে যাচ্ছে শুনে বেশ ভালো লাগছে।