এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি
সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আহসান বলেছেন, অজ্ঞাত ফোন থেকে ওই বাদীকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
গত সোমবার (৪ এপ্রিল) জিডিতে বাদী মাইদুল ইসলাম জানান, ‘গত ২৯ মার্চ আনুমানিক সকাল ৯টায় তার বাড়িতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে একজন ব্যক্তি নাম পরিচয় গোপন রেখে তাকে খুঁজতে যান। তিনি বাড়িতে না থাকায় তার বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং হুমকি দিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। পরে ওই ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নাম-ঠিকানা-পরিচয় গোপন রেখে তাকে হুমকি-ধমকি দেন। দুদিন থেকে কয়েকবার কল দিয়ে তাকে, তার পরিবারের সদস্যদের, তার মামলা পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা সিলেটের নেতাদের ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ক্ষতি করার, মিথ্যা মামলা দেওয়ার ও জানে মারার হুমকি দেন। এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এক গৃহবধূ। এরপর ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে ওসিসিতে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি। ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরান থানায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
দেশে-বিদেশে আলোচিত এ গণধর্ষণের ঘটনার ২ মাস ২৮ দিন পর আদালতে ৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের অর্জুন লস্কর, দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের রবিউল ইসলাম, কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) মাহফুজুর রহমান মাসুম, সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মিজবাউল ইসলাম রাজনকে অভিযুক্ত করে দণ্ডবিধির ৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৩৮৫/৩৪ ধারাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী, ২০০৩) এর /৭/৯/(৩)৩০ ধারায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
গ্রেপ্তার ৮ আসামির সবাই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে ৮ আসামি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে জেলা চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলার মনিটরিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ, এক বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই। মামলাকে ‘গলাটিপে শ্বাসরোধ’ করা হচ্ছে। অতীতে কোনো মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যেতে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার কোনো নজির নেই। সর্বশেষ কোনে পর্যায়ে রয়েছে তাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এখন আসামিদেরও আর আদালতে আনা হয় না। মামলাটির এমন অবস্থায় মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি এল।
এসএন