ছেঁউড়িয়ায় বায়ু দূষণ
নির্মাণসামগ্রীর দাম কমার অপেক্ষায় ঠিকাদার
চরম বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়া লালন শাহ সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে ঠিকাদার বসে আছেন নির্মাণসামগ্রীর দাম কমার অপেক্ষায়।
ছেঁউড়িয়া লালন শাহ সড়কের দবির মোল্লা রেলগেট থেকে শুরু করে লালন আখড়াবাড়ি পর্যন্ত সড়কে কাজ না করে ফেলে রাখায় ধুলাবালিতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। সড়কটি বালি দিয়ে ফেলে রাখার ফলে সৃষ্টি হয়েছে এ ধুলাবালির। সবসময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার আশপাশে বড় বা মাঝারি কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে এখানকার বাতাস অনেকটাই বিশুদ্ধ ও নির্মল ছিল। তবে এখনকার বর্তমান চিত্র বেশ ভিন্ন রূপ নিয়েছে। তিন মাস আগে লালন শাহ সড়কের দবির মোল্লা রেলগেট থেকে শুরু করে লালন আখড়াবাড়ি পর্যন্ত সড়কটির কাজের দায়িত্ব ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। নতুন করে এ সড়কের দুই পাশ প্রশস্তকরণসহ ১ হাজার ১৩৫ মিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ কাজের চুক্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ পান লিয়াকত নামে এক ঠিকাদার। কিন্তু সড়কটির কাজ দীর্ঘদিন ধরে শেষ না হওয়ায় সড়কটির ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। এ সড়ক দিয়েই বাউল সম্রাট লালন শাহ্র আখড়াবাড়িতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ যাতায়াত করেন। যানবাহন চলাচলের ফলে ধুলাবালি বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
আখড়াবাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরের লালন শাহ্ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। শিক্ষার্থীরা এমন ধুলাবালিতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি শ্রেণি কক্ষে বসতেও তাদের অসুবিধা হচ্ছে। জানালা বন্ধ করেও কোনো লাভ হচ্ছে।
লালন শাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এ রাস্তার ধুলায় স্কুলে বসা যায় না। ক্লাস নিতেও অসুবিধা হয়। এ সড়কের কার্পেটিং না করে এভাবেই ঠিকাদার ফেলে রেখেছে। শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই ধুলাবালি একটু বেশি হয় তারপর রাস্তার কাজ শেষ না করে ফেলে রাখায় সমস্যা বেড়ে গেছে।
এ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সামুরুজ্জামান বলেন, বাসার জানালা দিনে বা রাতে কখনো খোলা রাখা যায় না। কিছু সময় জানালা খোলা রাখলে বাসায় থাকা সব ফার্নিচারের ওপর ধুলার আস্তরণ পড়ে ধূসর বর্ণ হয়। প্রতিদিনই জামা-কাপড় ধোয়া লাগে। কোনো পোশাক একবার পরলে দ্বিতীয়বার পরার উপায় থাকে না।
আরজিনা খাতুন নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, আমার ধুলায় অ্যালার্জি আছে। এ ছাড়াও আমি একজন অ্যাজমার রোগী, ধুলার কারণে ইদানিং আমি শ্বাসকষ্টে ভুগছি।
এ এলাকা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ইজিবাইক চালক রাকিব বিশ্বাস বলেন, এ রাস্তা দিয়ে গেলে ধুলায় চেহারা চেনা যায় না। প্রতিদিন দুইবার গোসল করতে হয়। বাড়ি থেকে আসার সময় একবার গোসল করে আসি বাড়িতে গিয়ে আবার গোসল করতে হয়। এ রাস্তা যে কবে ঠিক হবে আল্লাহ্ পাকই জানেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, এ এলাকার অনেক বাসিন্দাকেই এসব ধুলাবালির কারণে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, ‘ওই রাস্তায় কার্পেটং করা হয়নি। সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তো সেই কারণে ঠিকাদার একটু অপেক্ষা করছে। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে, অপেক্ষা করা যাবে না, দ্রুত কাজ করেন। খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে কথা হয়েছে।’
এসএন