অচিরেই ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ফিরে আসবে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ ফিরে আসবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এই লাইন ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে খাদ্যের জন্য মানুষের হাহাকার আর ছোটাছুটির চিত্রের মতোই। মানুষ খেকো বাঘের মতো দুর্ভিক্ষ সদর্পে সারাদেশে ছেয়ে যাচ্ছে। আজকের দৃশ্যপট এমন যে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে বিবিসিকে এক মধ্যবিত্ত বলছেন,‘লজ্জা করলে তো পেটে ভাত আসবে না।’
শনিবার (৫ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কাযালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতে ভোট ডাকাতির সরকার এখন শেষ বেলায় এসে নিত্যপণ্যের বাজার ডাকাতি শুরু করেছে। করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত মানুষ জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মতো ধুঁকে ধুঁকে চলছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীরবে অশ্রুপাত করছেন। অল্প দামে পণ্য বিক্রির সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পাশে লাইনে বুভুক্ষ মানুষের মিছিল চলছে। মধ্যবিত্তরা টিসিবির ট্রাকের পিছনে ছুটছে আর নিম্নবিত্ত, গরীব, অতি গরীব, দরিদ্র্য সীমার নিচের লোকজন অর্ধাহারে-অনাহারে কঙ্কালসার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের অটো ভোটের মন্ত্রীরা দ্রব্যমূল্য নিয়ে মশকরা করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছুই করার নেই। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলছেন-বর্তমান সরকারের ১৩ বছরে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য খুব কমই বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লোকদের, এ কথাটি তথ্যমন্ত্রী এড়িয়ে গেছেন। লুটেরাদের খনিতে বসে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মুখ ঢেকে টিসিবির গাড়ির পিছনে ছোটার দৃশ্য তিনি দেখতে পান না, ক্ষুধার্ত মানুষের বোবাকান্নাও শুনতে পান না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, হরিলুটের সরকার জনগণের ‘কালেক্টটিভ ফিউচার’ বরবাদ করছে। দুর্নীতির বৃদ্ধি বিকাশের আদর্শস্থল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই সর্বভুক আওয়ামী দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীদের কথা এমনই হবেই, যারা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে তাদের মুখ থেকেই এসবই শোনা যাবে। সব সম্পদ গ্রাস করে নেওয়া আওয়ামী সাহেবরা যা ইচ্ছা তাই বলছেন। সব জেনে বুঝেই তারা নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছেন, আর জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অসত্য কথা বলছেন। মন্ত্রীদের কথা-বার্তায় প্রমাণিত হয় সরকার নিজেই দুর্নীতিবাজদের একটা সিন্ডিকেট। সেই কারণেই তারা রাষ্ট্র নেতাদের মতো কথা বলেন না।’
সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘এ যেন এখন মগের মুল্লুক। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। দুর্নীতি, লুটপাট, অনাচার, অবিচার চলছে বল্গাহীন। দ্রব্যমূল্যের বাজারে আগুন লাগার ফলে জনগণের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'য়ের মতো অসহ্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে জ্বালানি তেল ও এলপিজি গ্যাসের দাম। বাড়ানো হয়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। মানুষ কি খাবে, কি না খাবে ? দেশে যখন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি চলছে তখন দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিদিনের মতো ওবায়দুল কাদের সাহেব মিথ্যার ঢোল বাজিয়েই যাচ্ছেন।’
শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘দেশে চলছে এক নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। অপরদিকে সারা বিশ্বে বিরাজ করছে এক যুদ্ধাবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ৫০ জনের এক বিশাল বহর নিয়ে নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে কি কারণে আরব আমিরাতে যাচ্ছেন এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে আরব আমিরাতে শেখ হাসিনার ঘন ঘন সফরের রহস্য কি ? আমরা আশা করি, সরকারের মন্ত্রীরা বিষয়টি জনগণের সামনে খোলাসা করবেন। গত এক যুগে শেখ হাসিনা কেন বারবার আরব আমিরাত সফর করছেন, এর নেপথ্যে কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে কিনা সেটিও সাহস থাকলে জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সারাদেশে পালন করার সময় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এক হিংসাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বর্বর সরকার পেশীশক্তি দিয়ে জনগণকে দমন করতে চাচ্ছে। পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’
এমএইচ/এসআইএইচ