যুদ্ধ এবং যুদ্ধ
যদি কখনো ‘যুদ্ধ’ না হতো তাহলে আজকের পৃথিবীটা কেমন হতো? আর যুদ্ধে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত যেসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তারা যদি বেঁচে থাকত তাহলে কেমন হতো আমাদের আজকের সমাজ সংসার? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই দুটি বিষয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো, আসলে যুদ্ধ ছাড়া কি পৃথিবী বা মানুষের অগ্রগতি সম্ভব ছিল? কারণ আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না, মৃত্যু চাই না!
মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে দেখা যায়, মানব প্রজাতি বা হোমো স্যাপিয়েন্স প্রতিকূল পরিবেশে হিংস্র প্রাণী এমনকি নিজ প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এ পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে। তারই প্রমাণ হিসেবে লাখ লাখ বছর আগের পাথরের তৈরি অস্ত্র, ফসিল বা মমি আবিস্কৃত হচ্ছে।
উইকিপিডিয়াতে আছে, ‘প্রাগৈতিহাসিক যুদ্ধের প্রাচীনতম প্রমাণটি হলো জেবেল সাহাবাতে অবস্থিত একটি মেসোলিথিক কবরস্থান, যার বয়স ধরা হয়েছে আনুমানিক প্রায় ১৪,০০০ বছর। সেখানে থাকা কঙ্কালগুলোর প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশেই ভয়ানক মৃত্যুর চিহ্ন দেখা গেছে। প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, যখন থেকে রাষ্ট্রগুলোর উত্থান শুরু হয়েছে, তখন থেকেই বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে সামরিক ক্রিয়াকলাপ দেখা গেছে।’
ইসলাম ধর্মমতে, শুরুতে আদি পিতা হযরত আদমের পুত্র হাবিল-কাবিলের ভ্রাতৃঘাতি লড়াই হয়েছিল। আর হিন্দুধর্মে মহাভারতের যুদ্ধের বিবরণী এখনো রোমাঞ্চিত করে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এবং ৫০ বছরে অনেক এগিয়েও গেছি। এভাবে আরও অনেক দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে এবং এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। তার মানে এই না যে, আমি যুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করছি! সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে যুদ্ধবিদ্যারও এমন অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে যে, মহাকাশেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এখন অঙ্গুলি হেলনে মুহূর্তে পারমাণবিক ধ্বংসলীলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে পুরো পৃথবী।
আমার কথা হলো–পৃথিবীতে যুদ্ধ-যুদ্ধ অনেক হয়েছে। আমরা আর যুদ্ধ বিগ্রহ চাই না। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হোক। আর নয় মানুষের জীবনহানি। অধিকার নিশ্চিত হোক সব মানুষের। ফিলিস্তিনি, রোহিঙ্গাসহ সব নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর। যুদ্ধের জন্য প্রতি বছর ব্যয় করা লক্ষ-কোটি অর্থ ব্যয় হোক নিরন্ন মানুষের কল্যাণে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
লেখক: সাংবাদিক
এসএ/