বিআরটিএ’র প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
বিআরটিএ এর দেওয়া প্রতিবেদনে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতদের সংখ্যা কম দেখানোর কারণ জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বিআরটিএর প্রণীত এপ্রিল মাসের দিনভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে সংগঠনটি।
একইসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতি দাবি করেছে, ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে সেটি সঠিক ও তথ্য নির্ভর।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিআরটিএ’র সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনটি প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এর আগে এবারের ঈদযাত্রায় ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ৫৬৫ জন আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন বিআরটিএর পক্ষ থেকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অবাস্তব ও কাল্পনিক দাবি করে সংগঠনটির কাছে প্রতিবেদনের বিস্তারিত চেয়ে চিঠি দেয়।
চিঠিতে একই সময়ে বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের ছেয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫১টি, নিহত ৮৯ জন, আহত ৫৫জন বেশি কেন হয়েছে ব্যাখ্যাও দাবি করেন বিআরটিএ।
যাত্রী কল্যাণ বলছে, বিষয়টি বিশ্লেষনের জন্য তারা বিআরটিএর প্রস্তুতকৃত এপ্রিল মাসের ০১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত দিন ভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলে বিশ্লেষণের পর পরই দ্রুততম সময়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ঈদযাত্রার সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য বিআরটিএ’র কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে বলা হয়, বিআরটিএ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তৈরি করে মাস ভিত্তিক প্রকাশ করছে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিআরটিএর প্রতিবেদনের সাথে পুলিশের প্রতিবেদন বা বেসরকারি কোনো সংগঠনের প্রতিবেদনের মিল নেই। যাত্রী কল্যাণ সমিতির ঈদ যাত্রার সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ৫৬৫ জন আহত হয়েছে। যা দেশের প্রচার বহুল ও বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। তা আমরা একত্রিত করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি মাত্র।
বাংলাদেশে সংগঠিত দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশও গণমাধ্যমে আসে না। তার একটি বাস্তব প্রমাণ এবারের ঈদে আগে পরে ১৩ দিনে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ১০০৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৩৮৪ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত রোগী ছিলেন। ওই হাসপাতালে ১৫ দিনে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তির পরিমাণ ১১৫৪ জন।
একই সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৫৫ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫০১ জন। এই তিন হাসপাতালে ঈদের আগে পরে ২,০০০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। অথচ জনগণের অর্থে তৈরিকৃত বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে ঈদের আগে পরে ১৫ দিনে আহতের সংখ্যা ৫১০ জন।
এই চিত্র সামনে রাখলে বিআরটিএ’র সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন সঠিক কিনা যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে।
সারা দেশের হাসপাতালগুলোর হিসাব বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ঈদের আগে পরে ১৫দিনে উল্লেখিত ৩ হাসপাতালে ২,০০০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। এই ৩ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর পরিমাণের চেয়ে বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে উঠে আসা আহত রোগীর পরিমাণ কয়েক গুণ কম হওয়ায় বিআরটিএ’র সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনটি অবাস্তব ও কাল্পনিক কি না বিভিন্ন মহল থেকে যাচাই বাচাইয়ের প্রশ্ন উঠেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আন্তরিক। কিন্তু বিআরটিএ দেশে সংঘঠিত সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র সরকারের সামনে তুলে না ধরে, বার বার সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে এমন তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেশে দুর্ঘটনা কমেছে মর্মে জাহির করতে চাই। সড়ক দুর্ঘটনার মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিক হলেও বিআরটিএ সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য উপাত্ত কম দেখিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে, ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান বা অঙ্গ সংগঠন নন। বিআরটিএ বা সরকার যাত্রী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা দেয় না। সুতরাং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান জনসম্মুখে প্রকাশ না করার জন্য বলা বা প্রকাশ করার আগে বিআরটিএ-কে দেখাতে বলা বিআরটিএর এখতিয়ার বর্হিভূত বলে আমরা মনে করি।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী, উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার বক্তব্য থাকে। তাই যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব দুর্ঘটনার সংবাদগুলোকে সঠিক ও বস্তুনিষ্ট হিসেবে ধরে নেন। তারপরও বিআরটিএর পত্রের মর্মানুযায়ী সরেজমিন স্পটে স্পটে যাচাই বাছাইয়ের জন্য সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এনএইচবি/এমএমএ/