জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্থানীয় শিল্পকে আরও কার্যকর করতে দেশীয় বাজার সম্প্রসারণ এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন ‘আমরা রপ্তানিও যেমন করব তেমনি নিজের দেশের বাজারও যাতে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরও কার্যকর হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারবে।’
ববিবার (১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ-২০২৩) উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের কূটনীতি রাজনৈতিক কূটনীতি নয়, এটি হবে অর্থনৈতিক কূটনীতি। বিদেশে আমাদের সকল দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি এটা পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে।’
তিনি বিভিন্ন দেশে যখন গেছেন সেখানকার রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এই বিষযে ব্রিফ করেছেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও একটি উদ্যোগ রয়েছে যেখানে যে পণ্যের চাহিদা বেশি সেই পণ্যটা আমাদের দেশে আমরা উৎপাদন করে রপ্তানি করবোৎ-এভাবেই বাণিজ্য আমরা বৃদ্ধি করব।
তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তির প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাটা কার্যকর করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন কমিটি করে কোন খাতে আমাদের কী কী করণীয় সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা দুই বছর সময় নিয়েছি এই কোভিড এর কারণে, ২০২৬ এর মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ কার্যকর করবো, যেটা ২০২৪ এ করার কথা ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরই আসলো যুদ্ধ, সেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সিনিয়র বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ ‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া এবং ভারতসহ ১০টি দেশের প্রায় ১৭টি সংস্থা স্থানীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে।
রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পণ্য বহুমুখীকরণ, খাদ্য প্রকিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু পণ্যের উপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা। আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা এবং আমরা যত বেশি বাজার পাব তত বেশি আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারব। আর আমাদের দেশের মানুষের কর্ম ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বাইরে কল-কারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। তার বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ৫জি চালু করব। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।
সেবা খাত বিশেষ করে আইটি ও আইটি এনাবল সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আর গ্যাস এটা যদি একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা তো দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের যাওয়ায় এখন লোডশেডিং কমে গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি অনুষ্ঠানে পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবেও ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের দীর্ঘ ২১ বছর পরে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে আসার সুযোগ পায় এবং তার দলের যে অর্থনৈতিক নীতিমালা সেখানে বিরাট একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে যার মাধ্যমে বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আজকে আপনারা যা যা দেখেন এত টেলিভিশন, বিমান, হেলিকপ্টার সার্ভিস, ইন্ডাস্ট্রি ব্যাংক, বীমা, সকলের হাতে মোবাইল ফোন এতকিছু সম্ভব হয়েছে আমাদের সেই বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার নীতিমালা নিযে এগিয়ে যাবার কারণে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় বার সরকারে আসার সময় তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার।
আজকে দেশ ডিজিটাল হয়েছে এবং ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে জাতি যে সময় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছিল সে সময়ই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে।
তার সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রবৃদ্ধি তাঁর সরকার ৮ এ তুলে আনতে সক্ষম হলেও কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে আমাদের প্রবৃদ্ধিও কিছুটা কম হয়, তবে ধারবাহিকভাবে ৬ ভাগের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
এমনকি ৭ ভাগ পর্যন্তও তুলতে পেরেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে।
এমএমএ/
