লামার ভুক্তভোগীদের হয়রানি না করতে মানবাধিকার কমিশনের আদেশ
লামার সরই ইউনিয়নের তিন পাহাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে কোনো রকম হয়রানি না করতে আদেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বান্দরবান জেলা প্রশাসককে দেওয়া এই আদেশে কমিশন অগ্নিকােণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ও কমিশনের বেঞ্চ-২-এর সভাপতি ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশটি জারি করা হয় সম্প্রতি (২০ সেপ্টেম্বর)।
কিন্তু ভুক্তভোগী তিন গ্রামবাসীর অভিযোগ, মানবাধিকার কমিশনের আদেশের পরও স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’-এর একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদেশটি জারি করে।
কমিশনের আদেশে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল বান্দরবানের লামা উপজেলা লংকম কারবারি পাড়া, রেংয়েন কারবারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়ার প্রায় ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেওয়া, পানির ঝর্ণা বিনষ্ট করার ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের অত্যাধিক কষ্টে জীবন যাপনের বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
জুম চাষের জমি পোড়ানো এবং স্থানীয়দের খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাব তৈরি করে জীবন ও জীবিকার সংকট সৃষ্টি করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং এ বিষয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী মর্মে কমিশন মনে করে।
এ বিষয়ে কমিশন তাদের আদেশে বলেছে, স্থানীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে মর্মে অবহিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদেশ দিয়েছে কমিশন।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কোনভাবেই কোনো হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগীরা যাতে কোন হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপারকে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে সার্বিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অবস্থা প্রতিবেদন আকারে কমিশনের নিকট দাখিলের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসককে এবং বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশনামায় আরও বলা হয় যে, কমিশনের আদেশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠিকে যাতে কোনভাবেই হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জাড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/