পূজামণ্ডপে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা ডিএমপির
দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কারণ, বেশ কিছু পূজা মণ্ডপ ঝুঁকিতে রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।
এ সময় কমিশনার বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, ৫০ জন যুবক জঙ্গি হামলার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে হামলার জন্য ট্রেনিং ও করছে, এগুলোর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পূজায় কোনো সহিংস ঘটনার আগে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পূজা মণ্ডপে আমাদের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স মোতায়েন থাকবে। পূজায় কোনো ধরনের নাশকতা যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে আমরা কাজ করছি। তারপরেও কোথাও হামলা হলে সেটি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
রাজধানীতে ২৩৩টির ও বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসব জায়গায় কেমন নিরাপত্তা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরমধ্যে চারটিকে বিশেষ মণ্ডপ হিসেবে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। এ চারটা বিশেষ শ্রেণির মন্ডপে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে থেকে শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সবকিছু থাকবে।
কমিশনার আরও বলেন, এ ছাড়া, ঢাকায় ৫টা বৃহত্তর মন্দির রয়েছে। সেগুলো হলো-সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের পূজামণ্ডপ। এগুলোতেও সিসিটিভিসহ আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
এ ছাড়া, ২ তারকা চিহ্নিত ৮৬টি পূজামণ্ডপ, এক তারকা বিশিষ্ট ৭৭টি এবং সাধারণ শ্রেণির ৬১টি পূজামণ্ডপের ও বেশি রয়েছে। এসব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আমাদের যেমন সাধারণ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে, তেমনি আয়োজকদের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, যেসব পুণ্যার্থীরা আসবেন তাদেরকে ব্যাগসহ বেশ কয়েকটি জিনিস আনা নিষেধ রয়েছে। এবং তাদের তল্লাশিসহ যেসব জিনিস নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ তারা যেন সেগুলো নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পূজায় এসে ইভটিজিং, মাদক নিয়ে নাচানাচি প্রতিরোধ এবং সারা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকবে। এ ছাড়া, বিসর্জনের দিন নির্দিষ্ট রুট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিসর্জনস্থলে পৌঁছাবে। সুশৃঙ্খলভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা এখন অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছে। তারা সেলফ রেডিকালাইজড হয়ে (লোন উলফ) হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করছে। কেউ তাদের পোস্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা অ্যালার্ট আছি।’
তিনি বলেন, বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় দেশের প্রতিটি মণ্ডপে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, পূজা শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মণ্ডপে আনসার সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি করা হবে।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছর দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা গতবারের তুলনায় বাড়ছে। এ বছর মোট ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছর কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মণ্ডপের ঘটনা মাথায় রেখে এবারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের বলেছি, প্রতিটি মণ্ডপে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) থাকা বাধ্যতামূলক, আর সার্বক্ষণিক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল থাকতে হবে। এ ছাড়া, মণ্ডপের সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে, এমন জায়গায় যাতে না হয় যেখানে গাড়ি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৌঁছাতে সমস্যা হয়।
সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করার সামর্থ্য সব মণ্ডপের আছে কি না-সে বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হবে। সিসিটিভি না থাকলে সেখানে বেশি নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।
এবার নাশকাতর শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু নিরাপত্তার ঝুকি রয়েছে।
নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কেন কুমিল্লার ঘটনা ঘটল-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এর দায় পূজা আয়োজকদের। এ জন্য পূজা আয়োজকদের সর্তক থাকতে হবে। তারা পুলিশের কথা শোনেনি। যদি কুমিল্লায় স্বেচ্ছাসেবক থাকত, তাহলে ওই ঘটনা ঘটত না। কুমিল্লার মণ্ডপে একজন নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তাও সে মণ্ডপ থেকে অনেক দূরে বেঞ্চে রাতে ঘুমিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, গত বছরের দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা শহরে একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও রংপুরেও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে আমরা সর্তক থেকে কাজ করব।
তিনি বলেন, যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া, মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বক্ষণিক নজরদারিও থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাবতীয় নিরপত্তা ব্যবস্থায় ‘সম্প্রীতির’ বাংলাদেশে আর কোনো অঘটন ঘটবে না বলে আশা করেন ডিএমপি কমিশনার।
কেএম/এমএমএ/