‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা র্যাবের কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলেনি’
র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, র্যাবের সাবেক ডিজি ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা র্যাবের কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব ফেলেনি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সংশোধনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সংশোধনের চেষ্টা চলছে। র্যাব সবসময় আইন মেনে কাজ করে। অপরাধীরা আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।
এলিট ফোর্সটির বিদায়ী মহাপরিচালক বলেন, র্যাব মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বলেই মাদক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জঙ্গি বিস্তার রোধে আমাদের জোরাল অভিযানের কারণে উল্লেখযোগ্য জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার সময়ে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা হয়নি।
করোনাকালে র্যাবের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘র্যাব ডিজি হিসেবে বৈশ্বিক মহামারির সময় দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের করোনা আক্রান্ত র্যাব সদস্যদের জন্য ডাটাবেজ, অত্যাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বিপুল র্যাব সদস্য করোনা আক্রান্ত হলেও আমরা মনোবল হারাইনি। করোনায় মানবিকতার চরম বিপর্যয় ঘটেছিল। এসময় র্যাব করোনা আক্রান্ত মানুষদের সেবায় এগিয়ে গিয়েছে। র্যাবের হেলিকপ্টারে দুর্গম এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করিয়েছি।’
নিষেধাজ্ঞার কারণে র্যাব ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটা কঠিন সময় ছিল কি না? এ কারণে বন্দুকযুদ্ধ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তা মনে করি না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তোমরা এদেশের পুলিশ, এদেশেরই নাগরিক। আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন আমরা দাঁড়াব। যখন আমরা আক্রান্ত হই, মাদক, অস্ত্র উদ্ধার, মানবপাচারকারী যখন আমাদের উপর আক্রমণ করে তখন আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আইনে যে ক্ষমতা র্যাবকে দিয়েছে তা আমরা ক্রস করি না।’
ইদানিং বন্দুকযুদ্ধ কমে গেছে। তাহলে র্যাবের উপর হামলা কমে গেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে র্যাব ডিজি বলেন, ‘যেখানে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একটা লোক দৌড় দিল, ধাক্কা দিলো আর গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যে ডিমান্ড করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে র্যাব। কিন্তু মাদক বাড়ছে মাদকসেবীও বাড়ছে। তাহলে মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান ব্যর্থ কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ করছি সেটা বৈশ্বিক যুদ্ধ, এই যুদ্ধ শুধু আমরা না, বিশ্বজুড়েই চলছে। কারাগারে যে আসামি তার বেশিরভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু র্যাব নয়, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের ধরছে। মাদকের বিষয়ে সবার ঘর থেকেই সচেতনতা দরকার। সন্তান কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের।
তিনি বলেন, ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে আমরা কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই এটা বলার অবকাশ নেই। যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম তাহলে কারাগারে এতো মাদকের আসামি থাকত না। আমরা সবাই সোচ্চার হলে শিগগিরই মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করি।
২০২০ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব নেবেন।
উল্লেখ্য, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব ছাড়াও বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
কেএম/আরএ/