কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে বিটিআরসির নির্দেশনা
মোবাইল ফোনে কলড্রপ, কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বিটিআরসি। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ জানান, অন নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ হিসাবে দৈনিক ১ম ও ২য় কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ৩টি করে পালস (প্রতি কলড্রপের জন্য ৩০ সেকেন্ড) টকটাইম দিতে হবে।
পরবর্তী ৩য় থেকে ৭ম কলড্রপের প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৪টি পালস বা ৪০ সেকেন্ড করে গ্রাহককে টকটাইম ফেরত দিতে হবে।
তিনি বলেন, অন-নেট বা একই অপারেটরের ভয়েস কলড্রপের ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আর অফ-নেট বা ভিন্ন অপারেটরের কলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা তার পদ্ধতি কী হবে, সেটা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে।
কলড্রপের ক্ষতিপূরণ কীভাবে দিতে হবে, সেই বিষয়ে বিটিআরসি তিনটি শর্তও দিয়েছে টেলিকম অপারেটরদের।
কল ড্রপের ফলে ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল (০০:০০ ঘণ্টা) থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ, ফেরত প্রাপ্ত টকটাইম সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হওয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হতে কল বাবদ কোনো টাকা কাটা যাবে না।
কল ড্রপের ফলে ফেরতকৃত টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএমএস-এর মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে।
কোনো অপারেটর চাইলে কলড্রপ হওয়ার পর ওই দিন থেকেই কল মিনিট ফেরত দিতে পারবে।
নাসিম পারভেজ বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে গ্রাহক কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে। জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সব মোবাইল অপারেটর অভিন্ন ইউএসএসডি কোডের (*121*765#) মাধ্যমে একজন গ্রাহক পূর্ববর্তী দিন বা সপ্তাহ বা মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে।
কলড্রপ ঠেকাতে ২০১৬ সাল থেকে বিটিআরসির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে নাসিম পারভেজ জানান, এতদিন কোনো অপারেটর প্রথম কলড্রপের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিত না। গ্রাহকের যত কলড্রপ হত, তার প্রায় ৬৫ শতাংশই হয় প্রথম কলড্রপ। প্রথম থেকে ৭ম বার পর্যন্ত কলড্রপ হয় ৯৮ শতাংশের বেশি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কলড্রপের বিষয়ে সিদ্ধান্তকে টেলিকম খাতে জনগণের জন্য নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টিকে নতুন ‘মাইলফলক’ হিসাবে দেখছেন।
তিনি বলেন, আমাকে সেবা দেওয়ার কথা ছিল, দাওনি। মানসিক যন্ত্রণা, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কথা শেষ করতে না পারার বিষয় এখানে আছে। সেবা পাওয়া আমার অধিকার সেটা দাওনি। সেই অধিকার রক্ষায় আমরা নতুন মাইলফলক তৈরি করলাম।
তিনি বলেন, কলড্রপ হচ্ছে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিটিআরসি তা হতে দেবে না।
কলড্রপের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্ন জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সেবার মান তাদের বাড়াতেই হবে। তারা সেবার মান না বাড়াতে পারলে, তার জন্য গ্রাহকরা ভুগতে পারে না। কারণ, ক্ষতিপূরণ তো আমার দরকার নেই, আমি চাই সঠিক সেবা।
সংবাদ সম্মেলনে কলড্রপের হিসাব তুলে ধরতে গিয়ে টেলিটক ছাড়া বাকিদের হিসাব উপস্থাপন করা হয়েছিল।
এ নিয়ে এক প্রশ্নে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, টেলিটককে একইভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের তথ্য আমরা নিইনি, এটা ঠিক না। তথ্য নিয়েছি, কিন্তু প্রেজেন্টেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বিটিআরসির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কলড্রপ গ্রামীণফোনের। তারপরে রয়েছে রবি ও বাংলালিংক।
প্রসঙ্গত,মোবাইল অপারেটরগুলোর কলড্রপ নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। ২০১৬ সালে সংসদেও তা নিয়ে সমালোচনা হয়। এর পর কলড্রপের হিসাব কষতে শুরু করে বিটিআরসি।
এনএইচবি/আরএ/