আমি ফিট দেশ ফিট: হোসেন জিল্লুর
ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘পর্বত আরোহণ একটি কঠিন বিষয়। তার অনেকগুলো বিষয় আছে, এর মধ্যে স্পোর্টস বেশি জড়িত। স্পোর্টসের মাধ্যমেও আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূলবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, গভীর করে তুলতে পারে। একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি মনে করি, একটি জাতির উত্থান ও পুনর্জাগরণ একমাত্রিক উন্নয়ন, যেমন শুধু অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি তাহলে কিন্তু হবে না। স্পোর্টস কিন্তু বাংলাদেশের পুনর্জাগরণে প্রথম একটা ক্ষেত্র হওয়া উচিত। খেলার মাঠে কত কিছুই আছে অথবা পবর্ত আরোহণে কত কিছুই আছে। এটা শুধু ব্যক্তি স্বার্থের বিষয় নয়, দলগত জায়গাগুলো, প্রস্তুতির জায়গাগুলো গুরুত্ব পায়, শারীরিক সক্ষমতাগুলোও গুরুত্ব পায়। তাই স্পোর্টসকে আগামীতে একটু অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে। অনেক দেশ আছে যারা শুধু স্পোর্টসের মাধ্যমে তাদের জাতির পুনর্জাগরণ ঘটেছে। পর্বত আরোহণ করে যারা এই ধরনের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে তাদের প্রতি শুভ কামনা। প্রত্যাশা করছি তারা যেন নিরাপদে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন এবং ফেরত আসতে পারেন।’
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অভিজিত 'দোগারি হিমাল' শিখরে বাংলাদেশ-নেপাল সম্মিলিত অভিযান উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন ও পতাকা প্রদান করতেই এ আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ-নেপাল কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার জন্য দুই দেশের আট পর্বতারোহী এই অভিযানে অংশ নেবেন। অতিথিরা বাংলাদেশ দলের নেতাকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। অ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হক সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশিদের সম্পর্কে অনেক জনপ্রিয়তা থাকতে পারে কিন্তু সেখানে শারীরিক সক্ষমতার বিষয়ও আছে। ফিটনেস কিন্তু শুধু জিমে যায় মাসল অনেক বড় এটাই শুধু ফিটনেস নয়। ফিটনেস সবার থাকা দরকার, এটা জাতীয় লক্ষ্য হওয়া দরকার। কারণ আপনি ফিট না হলে কাজ করতে পারবেন না, প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন না। ফিট না হলে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন না। ফিট না হলে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সময়ে সেইভাবে নিজের ভূমিকা রাখতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, যদিও ফিটনেসের সঙ্গে বিশাল খরচের একমাত্রিক সম্পর্ক নয়। আমরাও পর্বত আরোহণে যেতে চাই, তরুণরা হয়তো যাবে চূড়ায় আমরা তো অন্তত বেজক্যাম্প পর্যন্ত যেতে চাই। অভিজ্ঞতা আমার খুব বেশি নেই কলেজ পর্যায়ে শুধু চট্টগ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আমি মনে করি কোনো বয়স-লিঙ্গ ফিট হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নয়, বাধা হতে পারে না। আমরা যদি নতুন বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশের অর্জন দেখতে চাই তাহলে এটা একটা ফিট বাংলাদেশ হতে হবে। ফিটনেস ছাড়া কোনো ক্ষেত্রে সেটা ফ্যাক্টরিতে হউক, অফিস হউক, ডিপার্টমেন্টে হউক, বিশ্ব মঞ্চে হউক এই ফিটনেসের বিকল্প নেই। আমি ফিট; দেশ ফিট।’
অর্থনীতিবিদ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘উদযাপন করতে হলেও সেখানে কিন্তু অনেক কিছু উত্থাপন করা যায়। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো ম্যাসেজ তৈরি করা যায়। উদযাপন শুধু হাসি-খুশি ও আনুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়। এগুলো সহজ ব্যাপার নয়, পরিশ্রম সাহসকিতার বিষয়, ঝুঁকির বিষয়। তারপরও যারা অব্যাহত রেখেছেন এটা অত্যন্ত প্রসংশার দাবি রাখে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এখানে নারী পুরুষ সবাই অংশ নিচ্ছেন। এর মানে হচ্ছে এককভাবে শুধু পুরুষের বিষয় নয়। নারীরাও সমান দক্ষতায় এই সমস্ত কাজে জড়িত হচ্ছেন। এটাও কিন্তু সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনামূলক চিন্তা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-নেপাল আমাদের প্রতিবেশি দেশ। উভয় দেশের মধ্যে অত্যন্ত একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে। নানামুখী সম্পর্ক আরও গভীর করার এখানে আরও সুযোগ রয়ে গেছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে যে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শ্রদ্ধা ও সাম্যের ভিত্তিতে এটাও কিন্তু আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জাতীয় লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ধরনের সহযোগিতা, আমাদের তো অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা আছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম যৌথভাবে কিছু করছে, যৌথভাবে কাজ করার ক্ষেত্রগুলো বেছে নিচ্ছে, আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি উভয়েই বাংলাদেশি পতাকা ও নেপালি পতাকা সেই দোগারি হিমাল চূড়ায় যখন বসাবেন তখন আমাদের যে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সেটা আরও গভীর হবে, আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। নতুন প্রজন্মকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-নেপালের কূটনৈতিক ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই এধরনের একটা যৌথ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উভয় দেশের জন্য ভালো একটা খবর। দুই দেশের ভাষাগত ভিন্নতা থাকলেও একে অপরের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। আমিও বাংলা শেখার চেষ্টা করছি। বাংলা সংবাদপত্র পড়তে চেষ্টা করছি, আশা করছি খুব শিগগিরই আমি আমার দায়িত্ব পালনে বাংলা ভাষাতেও কথা বলতে পারব। সামাজিকতা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উভয় দেশ একে অপরের পরিপূরক। এক দেশ অপর দেশের নেতা ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ আছে। আমরা সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুসম্পর্কে নিয়ে যেতে চাই, প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ভ্রমণ তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ–নেপাল থেকে যারা দোগারি হিমাল শিখরে পৌঁছাতে অভিযানে যাচ্ছে তাদের প্রতি শুভ কামনা জানাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি তারা বিজয়ী হবে এবং এটা ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীরে নিতে সক্ষমত হবে। যদিও এই ধরনের অভিযান অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।’
বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিতে যাওয়া এম এ মুহিত বলেন, দোগারি হিমাল শিখরে বাংলাদেশ–নেপাল যৌথ অভিযানটি হচ্ছে আমাদের জন্য সম্পূর্ণ অজানা। সবকিছু অজানা তাই সেখানে গিয়ে আমাদের টিক করতে হবে কি সম্মুখীন অপেক্ষা করছে। কাঠমান্ডুতেও আমাদের একটি সংবাদ সম্মেলন হবে তারপর আমরা অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করব। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা আশা করছি এই অভিযানটি ২৮ দিনে দোগারি হিমাল শিখর জয় করতে সক্ষম হব। বাংলাদেশের তরুণরা যে পৃথিবীর দুর্গম জায়গায় যেতে পারে সেই সহযোগিতা চান মুহিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্বতারোহী দলের তিন সদস্য ৩ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। চতুর্থত সদস্য ইকরামুল হাসান গ্রেট হিমালয়ান ট্রেইলে তার চলমান অভিযান ছেড়ে কাঠমান্ডুতে এই দলে যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, চার সদস্যের বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন এম এ মুহিত। যিনি দুইবার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন। ওপর তিন সদস্যের মধ্যে বাহলুল মজনু ও ইকরামুল হাসান একটি ৭০০০ মিটার চূড়াসহ হিমালয়ের একাধিক পর্বত আরোহণ করেছেন এবং রিয়াসাদ সানভী ভারতে পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নেপালে পর্বত আরোহণে অংশ নিয়েছেন। চার সদস্যের নেপাল দলের নেতৃত্বে থাকবেন বিখ্যাত পর্বতারোহী ও গাইড মিংমা গ্যালজে শেরপা।
বক্তব্যে রাখেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন মোহাম্মদ হারুন, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার ফজল মাহমুদ রনি।
এমএইচ/এসএন