উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মোস্তফা কামাল
গণমাধ্যম কখনোই সরকারের প্রতিপক্ষ নয়
গণমাধ্যম কখনোই সরকারের প্রতিপক্ষ নয়; বরং সহযোগী। কাজেই বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী গণমাধ্যম ছাড়া রাষ্ট্রব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে না, গণতন্ত্র স্থায়ী হয় না। বুধবার মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল ঢাকাপ্রকাশ-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল এ সব কথা বলেন।
ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে ঢাকাপ্রকাশ-এর শুভ উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিক, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, অভিনয়শিল্পী, সংগীত শিল্পী ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিগণ।
রাষ্ট্রে অন্যায় অনিয়ম হলে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি হলে তা ধরিয়ে দেয় গণমাধ্যম এমন মন্তব্য করে মোস্তফা কামাল বলেন, সরকার ভুল পথে পরিচালিত হলে, ভুল কাজ করলে গণমাধ্যমই সঠিক পথ বাতলে দেয়। যাতে সরকার সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে।
বক্তব্যের শুরুতেই ঢাকাপ্রকাশের প্রধান সম্পাদক বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তির মাসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করেন। এছাড়া স্মরণ করেন ত্রিশ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে।
করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে মোস্তফা কামাল বলেন, ’মহামারি করোনার কারণে সারাবিশ্ব ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে গণমাধ্যম। অসংখ্য সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। অনেকগুলো গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু গণমাধ্যম ছাড়া বেশিরভাগই ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। সামাজিক অনাচার দুরারোগ্য ব্যাধির মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। নীতি-নৈতিকতা এখন কেবল অভিধানের পাতায় শোভা পাচ্ছে।’
এ অবস্থায় গণমাধ্যমের ওপর হলুদ সাংবাদিকতা ভর করেছে উল্লেখ করে প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘সমাজের কিছু দুষ্টু লোক সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করছে। দেশের নিরীহ মানুষ অসৎ সাংবাদিকদের নিষ্ঠুর শিকার। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ব্যাহত হবে।’
প্রধান সম্পাদক নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘তিন দশকের বেশি সময় ধরে সংবাদ, প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছি। একজন রিপোর্টার থেকে সম্পাদক হয়েছি। কিন্তু ত্রিশ বছর পরেও সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে আজ আমি কুণ্ঠিত। কারণ, সাংবাদিকতা আর সাংবাদিকতার জায়গায় নেই।’
প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে, আগে মানুষ তথ্য গোপন করত। আর সাংবাদিকরা তা খুঁজে বের করে প্রকাশ করত। আর এখন সাংবাদিকরা তথ্য গোপন করে। আর মানুষ তা প্রকাশ করে। এই যদি হয় অবস্থা! তাহলে নিশ্চয়ই এ অবস্থার পরিবতন দরকার।’
এ অবস্থায় ঢাকাপ্রকাশের অবস্থান তুলে ধরে প্রধান সম্পাদক জানান, ‘আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। আমরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে চাই। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না। আমাদের সামর্থ না থাকলেও ইচ্ছাশক্তি আছে। অর্থ নেই, কিন্তু বড় স্বপ্ন আছে। আমাদের কণ্ঠ এখন নিচু থাকলেও নিশ্চয় এই কণ্ঠ উচ্চকিত হবে। তাই আমরা নতুনভাবে শুরু করেছি। আমাদের স্লোগান হচ্ছে-‘সততাই শক্তি, সুসাংবাদিকতায় মু্ক্তি’।
সমাজে গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অপর তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে, আইনসভা, বিচার বিভাগ, ও আমলাতন্ত্র। বোঝাই যাচ্ছে গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও অবস্থান কোথায়! স্বাধীন ও সার্বভৌম গণমাধ্যম ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পূর্ণতা পায় না। আসলে গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের পাহারাদার।’
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ভ নড়বড়ে হয়ে গেলেও চতুর্থ স্তম্ভ শক্ত থাকলে রাষ্ট্রকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। আর চতুর্থ স্তম্ভ নড়বড়ে হলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পূর্ণই ভেঙে পড়ে। রাষ্ট্র বিপদগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের ভবিষ্যতৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।‘
প্রধান সম্পাদক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গণমাধ্যমের পরতে-পরতে ঢুকে পড়া হলুদ সাংবাদিকদের বিতাড়ন করবে কে? কে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে বুকে আগলে রাখবে! প্রকৃতির নিয়মেই কি এর পরিবতন আসবে?’
ঢাকা প্রকাশের শপথের কথা উল্লেখ করে প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা শপথ নিয়েছি, সততাই শক্তি, সুসাংবাদিকতায় মুক্তি-এই নীতিতে আমরা অবিচল থাকব। আমরা অশুভ কোনো শক্তির কাছে মাথানত করব না। এ আমাদের অঙ্গীকার। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’
সততা ও সুসাংবাদিকতা চর্চার ব্রত নিয়ে এগুতে চায় ঢাকাপ্রকাশ। এজন্য বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে পত্রিকাটিতে কর্মরত আছেন একঝাঁক তরুণ ও মেধাবী সাংবাদিক।
গত ১ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা প্রকাশের লোগো উন্মোচন করা হয়। সাতজন বিশিষ্ট সম্পাদক ঢাকা প্রকাশের লোগো উন্মোচন করেন। এরপর থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক বিশিষ্টজন ঢাকা প্রকাশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারা নিয়ে এসেছে ঢাকাপ্রকাশ। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়াা নিউজ পোর্টাল। টেক্সট নিউজের পাশাপাশি পোর্টালটিতে থাকছে অডিও এবং ভিডিও নিউজ। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে থাকছে টকশো।
এছাড়া থাকবে ই-পেপার। প্রতিদিনের সংবাদ দিয়ে দিন শেষে হবে ই-পেপার। পাঠক ছাপা পত্রিকার স্বাদ পাবে ঢাকা প্রকাশের ই-পেপারে।
/এএন