শোকাবহ আগস্ট শুরু, মাসব্যাপী আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
শোকাবহ আগস্ট শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। এ মাস এলেই বাঙালি শোকে কাতর হয়ে যায়। এই মাসেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক, বাঙালির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল দেশদ্রোহী বিপথগামী একদল সেনা সদস্য। ঘাতকদের বুলেটে বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ১০ বছরের ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ঘাতকরা একে একে হত্যা করেছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৬ সদস্যকে।
এরমধ্য দিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের সদস্যদেরকেই হত্যা করেনি ঘাতকরা, তারা হত্যা করেছে পুরো বাঙালি জাতিকে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে। হত্যা করা হয়েছিল স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নকে। সেই দিনের পর থেকেই আগস্ট এলেই শোকের আবহ তৈরি হয় পুরো দেশজুড়ে।
১৫ আগস্টের ক্ষত আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঙালি। এরমধ্যে ২০০৪ সালে আরেকবার বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে ঘন অন্ধকার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ওই বছরের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় অতর্কিত ও উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা চালানো হয় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের উপর। সেই ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন।
সব মিলিয়ে বাঙালীর জীবনে আগস্ট হচ্ছে শোকগাঁথা এক মাস। বেদনার মাস। মহানায়ক হারানোর মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট।
সোমবার (১ আগস্ট) শোকগাঁথা রক্তাক্ত আগস্টের প্রথমদিন। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপ্ত হবে বাঙালি জাতি। দেখতে দেখতে জাতির পিতা হত্যার কালো অধ্যায়ের ৪৭ বছর হলো।
গতবছরের মতো এবারও মাসব্যাপী কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বীর বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ইতিহাসের দীর্ঘপথ পেরিয়ে বাঙালি জাতি পিতৃ হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও আমাদের প্রতিটি শিরা উপশিরা ও ধমনিতে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে এ মাস। ইতিহাসে হয়ত এ মাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শানিত করে সবাইকে। ১৯৭৫ সালের এই মাসেই বাঙালি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একাত্তরের পরাজিত ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে। পরাস্ত পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের নৃশংস শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার তথা মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা। এই শোকের মাসেই বাঙালির স্বাধীনতার স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার মাটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল। বাঙালি জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষিত প্রিয় স্বাধীনতা, লাল-সবুজ পতাকা, স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র।
বজ্রকণ্ঠে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে রক্তনদী পেরিয়ে অর্জিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বিশাল কারাগারে বন্দি রেখেও তাকে স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি ৪৭টি বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
শুধু রক্তাক্ত ১৫ আগস্টই নয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে। মৃত্যুজাল ছিন্ন করে ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। তাই আগস্ট মাস বাঙালির জীবনে অভিশপ্ত মাসও। তাই শোকার্ত বাঙালি জাতি পুরো আগস্ট মাসজুড়ে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
রবিবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোক শিখা প্রজ্বালন, আলোর মিছিল ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শোকের মাস আগস্টের মাসব্যাপী কর্মসূচি সূচনা হয়।
শোকাবহ পরিবেশে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজস্র সংগঠন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শোকের মাসের প্রথমদিনে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবনের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করেছে কৃষক লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্রতিদিনই থাকবে আওয়ামী লীগসহ সহযোগি সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচি। ১৫ ই আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী মহিলা লীগ আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। ২১ শে আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ওই দিন সকাল ১০ টায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে পুরো মাস জুড়েই থাকছে শোকাবহ আগস্টের নানা কর্মসূচি।
এসএম/এনএইচবি/