অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রশংসা আইওএমের
বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উপ-মহাপরিচালক উগোচি ড্যানিয়েলস। বাংলাদেশে পাঁচ দিনের (২২-২৬ জুলাই) সফর শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার (২৭ জুলাই) আইওএমের ঢাকা অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উগোচি ড্যানিয়েলস রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অব্যাহত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। আইওএম ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে।
সফর শেষে উগোচি ড্যানিয়েলস বলেন, ‘৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে অবস্থান ও সহযোগিতা করা এবং নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন সংক্রান্ত গ্লোবাল কমপ্যাক্টের একটি ‘চ্যাম্পিয়ন কান্ট্রি’ হিসাবে নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’
সফরের শুরুতে উপ-মহাপরিচালক (ডিডিজি) ড্যানিয়েলস কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। যেখানে ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে আসে।
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ না আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন উগোচি ড্যানিয়েলস।
কক্সবাজারে, আইওএম ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পানি এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রীসহ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা দিয়ে আসছে। উগোচি ড্যানিয়েলস কক্সবাজারে আইওএম পরিচালিত টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা, বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সৌর শক্তি চালিত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ক্লিনার এনার্জি প্রভিশন সিস্টেমস বিভিন্ন কর্য়ক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের অনেকগুলো জাতীয় পর্যায়ে নেয়া যেতে পারে।
ডিডিজি বলেন, ‘এই সংকটের দীর্ঘায়িত প্রকৃতির জন্য আমাদের সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া বাড়াতে হবে। মানবিক তহবিল হ্রাসের মুখে তারা যাতে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা চালিয়ে যেতে হবে।’
এই বছরের শুরুর দিকে, আইওএম ১৪ লাখ শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠির সহায়তার জন্য ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি আবেদন করেছে।
নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে আইওএম অভিবাসন ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা প্রদান করে। এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে উন্নত অভিবাসন সুশাসন, অভিবাসীদের সহায়তা, অভিবাসন এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অভিবাসন স্বাস্থ্য, অভিবাসন তথ্য এবং স্থানচ্যুতি ট্র্যাকিং এবং মানবিক সহায়তা।
ঢাকায় উগোচি ড্যানিয়েলস প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সক্ষাৎ করেন।
ডিডিজি ড্যানিয়েলস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন নিয়ে একটি নীতি সংলাপে অংশ নেন। সংলাপের সময় তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন।
সরকারী কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও উন্নয়ন অভিনেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় উগোচি ড্যানিয়েলস জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবিক গতিশীলতাকে যৌথভাবে মোকাবেলা করার জন্য বৃহত্তর প্রচেষ্টার পক্ষে কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতি সাতজনের একজন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হবে। ডিডিজি ড্যানিয়েলস বলেন, ‘কপ ২৭-এর আগে এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনা জলবায়ু অভিবানের বিষয়গুলোও যেন অন্তর্ভুক্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত।’
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান আবদুসাত্তর এসয়েভ বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের সফরটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আইওএম-এর গুরুত্ব প্রতিফলিত করে। একইসাথে বাংলাদেশের অভিবাসীদের সহযোগিতার অব্যাহত রাখার প্রতিফলিনও এই সফর।’
প্রতি বছর, আনুমানিক ১০ লাখের মত বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। ১৯৭৬ থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে গেছেন। এই অভিবাসীরা রেমিটেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অভিবাসী পাঠানোর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ এবং রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে অষ্টম স্থানে রয়েছে।
আরইউ/