অকটেন-পেট্রল আমাদের কিনতে হয় না: প্রধানমন্ত্রী
দেশে জ্বালানি তেলের সংকট নিয়ে সম্প্রতি যে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে তার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ডিজেল আমাদের কিনতে হয় এটা ঠিক, কিন্তু অকটেন ও পেট্রল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে রিফাইন করা পেট্রল ও অকটেন পাই। বরং যতটুকু চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি পেট্রল এবং অকটেন কিন্তু আমাদের আছে। অনেক সময় আমরা রপ্তানিও করি।’
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকার প্রধান এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী থাকতে হবে। বিদ্যুৎ দিয়েছি সত্য। যেহেতু বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে। উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে। আমরা মহাবিপদে যাতে না পড়ি, তার জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে কারণে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সাশ্রয়ী হবার চেস্টা করছি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি, এর মানে এই না যে বিদ্যুৎ একেবারে নাই বা শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু না। কিছু কিছু জ্ঞানী মানুষ আছে মাঝে মাঝে অনেক কথা বলে বেড়ায়। আসলে তারা কোনো খোঁজ রাখে কি না খবর রাখে কি না জানিও না। হঠাৎ দেখলাম একজন বলল ডিজেল...ডিজেল আমাদের কিনতে হয় এটা ঠিক। কিন্তু অকটেন আর পেট্রোল আমাদের কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে আই প্রোডাক্ট হিসেবে পেট্রল রিফাইন করে পেট্রলও পাই অকটেনও পাই। তারা অনেক বেশি জ্ঞানী তো তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার এত বেশি যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তারা ভুলে যায়। কিন্তু উল্টা পাল্টা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
দেশের রিজার্ভ নিয়ে সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার জবাবে সরকার প্রধান বলেন,‘আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। বিএনপির আমালে ২০০১-২০০৬, বিএনপি যখন ক্ষমতায় রিজার্ভ কত ছিল? তিন বিলিয়নের কিছু উপরে মাত্র ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন। আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর আমরা যখন সরকার গঠন করি ২০০৯ সালে কিছুটা বেড়েছিল যেখানে মাত্র ৭ বিলিয়নের মতো পেয়েছিলাম, সেখান থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। করোনাকালীন আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল এরপর আমদানি করতে হয়েছে আমদানি করতে যেয়ে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। তা ছাড়া আমরা যে ভ্যাকসিন কিনে দিয়েছি এই বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দিলাম বিনা পয়সায় টেস্টিং সেখানে তো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি একটা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ থেকে যা যা দরকার আমাদের তো সেগুলো বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়েছে। শুধু কেনা না আমাদের বিমান পাঠিয়ে বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে। সেখানে বিরাট অংকের টাকা খরচ করেছি। এটা মাথায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ থাকে কেন? কোনো আপদকালীন তিন মাসের খাদ্য শস্য কেনার মতো বা আমদানি করার মতো অর্থটা যেন আমাদের হাতে থাকে। তা আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন ছয় মাস নয় মাসের খাবারও কিনে আনতে পারব। তবে আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে খাদ্য শস্য যেন আমাদের কিনতে না হয়। আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেরা সাশ্রয়ী থাকি। তাহলে তো আর আমাদের রিজার্ভ খরচই হবে না।
আপদকালীনের জন্য থাকতে হবে। বাজেটে ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছি। জিডিপি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি সেগুলো কেন তাদের চোখে পড়ে না সেটা আমি জানি না। যারা আমাদের বুদ্ধিজীবী তারা অনেকে অনেক কথা লেখেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ লিখে ফেললেন যে পদ্মা সেতুতে কোনো আয় তো হবেই না বরং এটা অযথা পদ্মা সেতুটা নির্মাণ হয়েছে। পদ্মা সেতুতে কে চড়বে? কে ব্যবহার করবে পদ্মা সেতু? রেললাইন হচ্ছে সেটা নিয়েও আপত্তি এই রেলে কে চড়বে। দক্ষিণের মানুষ তো লঞ্চেই আসা-যাওয়া করে কেউ রেলে চড়বে না। এই হচ্ছে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের চিন্তা ধারা তারা আবার আর্টিকেল লেখে, জানি না এরা কি খেয়ে লেখে সেটা আমার কাছে সন্দেহ। বাংলাদেশটাকে কতটুকু চেনে সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ। দক্ষিণ অঞ্চলের গিয়েছে কি না আমি জানি না। এই অঞ্চলের মানুষের সমস্যাগুলো তারা জানে কি না, সেটা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে। তাহলে তারা বাংলাদেশের কি অর্থনীতিবিদ। আর কি লেখা লেখে। আর একটা প্রতিষ্ঠান আছে তারা সব কিছুতেই খারাপ দিক দেখে। জীবনে ভালো কিছু চোখে পড়ে না তাদের। মনে হয় যেন ওদের দৃষ্টিশক্তিটাই কমে গেছে। ওদের মাথার ভেতরে বিশেষ করে কেয়ারটেকার গভমেন্ট যখন ২০০৭ সালে এসেছিল তারা হয়তো তাদের মাথায় কোনো কিছু রেখে গেছে যার জন্য মাথার মধ্যে এটাই ঘোরে। একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেশে চলুক এটা তাদের পছন্দ হয় না। দেশটা যে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তাদের চোখে পড়ে না। কারণ, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যদি বাংলাদেশে থাকে তাহলে তাদের আবার কদর বাড়ে। তারা মনে করে তারাই জ্ঞানী তারাই সব পারে। কিন্তু আমরা হয়তো তাদের মতো অতটা জ্ঞানী না, অতটা লেখাপড়াও শেখেনি, কিন্তু দেশটাকে চিনি দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের
সঙ্গী আমরা।
তাদের কষ্টটা বুঝি আর বুঝি বলেই কিসে তাদের ভালো হবে, তাদের ভালো মন্দটাই অনুধাবন করতে পারি। আমরা জানি এবং বলতে গেলে বাস্তব যে জ্ঞান তার থেকে পদক্ষেপ নিই, কাজ করি। যে কারণে আওয়ামী লীগ পর পর তিন বার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ কিন্তু করোনা মোকাবিলা করেছি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জ্ঞানীরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তো উন্নয়নশীল দেশে যেতে পারেনি। আমাদের মতো আমরা যারা লেখাপড়া জানি না আমরা যখন ক্ষমতায় তখনই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা দেশের মানুষকে ভালোবেসে মাটি মানুষের জন্য কাজ করি বলেই এটা সম্ভব, যোগ করেন তিনি।
এমএস/এমএমএ/