‘সবাই আইলো আমার পোলাডা ক্যান আইলো না’
ইউক্রেনের ওলভিয়া সমুদ্রবন্দরে হামলার শিকার ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিককে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ আনা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মরদেহ নিতে বুধবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে এয়ারপোর্টে অবস্থান করেন তার স্বজনরা। স্বজনরা জানেন না যে, এই ২৮ নাবিকদের সঙ্গে তাদের প্রিয়জনের মরদেহ আসবে না। মরদেহ নেওয়ার আশায় তারা বিমানবন্দরের সিআইপি গেট, ভিআইপি গেট ও সাধারণ মানুষের প্রবেশের গেটগুলোতে ছোটাছুটি করেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৮ নাবিক দুই থেকে তিন গেট দিয়ে বের হতে পারেন। এর সুবাদে তারা বিভিন্ন গেটে অবস্থান করেন।
দেখা গেছে, নিহত হাদিসুরের লাশের অপেক্ষায় তার বাবা রাজ্জাক হাওলাদার এয়ারপোর্টের ভিআইপি গেটে অবস্থান করেন। তার ছোটভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স ও তার চাচাতো ভাই সোহাগ সিআইপি গেটে অবস্থান করেন। সর্বসাধারণের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে অবস্থান নেন মেজো ভাই তরিকুল ইসলাম ও তার মা রাশিদা বেগম।
স্বজনরা জানান, তাদের প্রিয় মানুষ হয়তো কোনো না কোনো গেট দিয়ে বের হবেন। কিন্তু নিহতের মরদেহ কোনো গেট দিয়ে বের হয়নি। এরপরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। তাদের কান্নায় পুরো এয়ারপোর্ট এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়।
এ সময় চিৎকার করে কান্না কণ্ঠে হাদিসুর রহমানের মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার পোলাডারে এনে দাও। সবাই এসেছে কিন্তু আমার পোলাডা আইলো না ক্যান?’ তার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে পুরো বিমানবন্দর এলাকার পরিবেশ।
রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের মূল আয় রোজগার করত আমার ছেলে হাদিসুর। ওরে চাকরিতে না পাঠালে হয়ত এমন হতো না। আমার বুকটা হাহাকার করছে। আমি কি আমার সন্তানের লাশ দেখতে পারব না? আমাদের কিচ্ছু লাগবেনা, তোমরা আমার পোলাডারে এনে দাও? গ্রামের মানুষ বলছে আজ আমার পোলাডার লাশ আসতেছে। কিন্তু এখনো আমার পোলা ক্যান আইলো না?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, হে আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও আমার পোলাডারে ফেরত দাও।
ওই জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি আমাদের সহকর্মী ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মৃত্যুতে। তিনি বলেন, আমরা তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি। হয়ত হাদিসুরের লাশ দেশে আনা হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (পূর্ব-ইউরোপ) সিকদার বদিউজ্জামান বলেছেন, জাহাজের নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য তিনটি মিশন একত্রে কাজ করছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশে ফেরা ২৮ নাবিক হলেন- জি এম নূর ই আলম, মো. মনসুরুল ইসলাম খান, সেলিম মিয়া, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজীব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মো. ওমর ফারুক, সৈয়দ আশিফুল ইসলাম, রাজীবুল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদী, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মোহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সারওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. আতিকুর রহমান, মো. শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
কেএম/আরএ/