মাকিন তিন ফাস্ট লেডির জীবন নিয়ে টিভি সিরিজ আসছে
যারা বিস্মিত, তাদের জন্য-আমেরিকার সবচেয়ে সুসজ্জিত আধুনিক অভিনেত্রীদের একজন এখনো উড়ে বেড়াচ্ছেন, যখন তিনি একটি নতুন চরিত্রে অভিনয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছেন, সেটি বিশেষত আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক নারীদের একজনের ভূমিকায়।
বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় অ্যাকাডেমি অ্যাওয়াড বা ‘অস্কার’ জয়ী অভিনেত্রী ভাইওলা ডেইভিস বলেছেন শো টাইম টিভির নিদিষ্ট পবে হতে যাওয়া ‘দি ফাস্ট লেডি’ সিরিজটি তাকে ভীষণ ভয়ের মধ্যে ফেলেছে। কেননা তিনি সাবেক ফাষ্ট লেডি মিশেল ওবামাকে রূপদান করতে যাচ্ছেন।
‘আপনার চিত্রায়ণের মাধ্যমে আপনি তাদের (ওবামা পরিবার) বিরক্ত করতে চাইবেন না’-বলেছেনও ‘টেলিভিশন ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন প্রেস ট্যুর’র একদল আলোচকের সামনে আলাপে।
মিসেস ওবামা এখানে সিরিজ হওয়া মাকিন তিন ফাস্ট লেডির একজন হতে যাচ্ছেন।
‘মিশেল ওবামা’ নামে আমাদের কাছে বিখ্যাত মাকিনীদের ইতিহাসের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান রাষ্ট্রপতির তেমন জাতের স্ত্রী। একজন উকিল ও লেখক হিসেবে বিখ্যাত। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পযন্ত দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী। তিনি বিখ্যাত হাভাড ল স্কুলের ছাত্রী। ইউনিভাসিটি অব শিকাগোর স্টুডেন্ট সাভিস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ডিন ছিলেন। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ফর কমিউনিটি ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের এক্সটারনাল অ্যাফেয়াস বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই বারাক ওবামার ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল জুড়ে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ের প্রচারাভিযানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নারীদের একজন রোল মডেল। দারিদ্রতা, শিক্ষা, পুষ্টি, শারিরীক কাযক্রম, ভালো খাবার নিয়ে কাজ করেছেন ও করছেন। মাকিন ডিজাইনারদের সমথন করেন ও তাকে একজন ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সিরিজে ‘মিশেল ফাইফার’ ‘বেটি ফোড’ চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন।
বেটি ফোডের পুরো নাম এলিজাবেথ অ্যান ফোড। জন্মেছেন ১৯১৮ সালের ৮ এপ্রিল, মারা গিয়েছেন ২০১১ সালের ৮ জুলাই। দীঘজীবন লাভ করা নারীটি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পযন্ত মোটে তিনটি বছর মাকিনীদের ফাস্ট লেডি ছিলেন। তখন তার স্বামী জেরাল্ড ফোড (জেরাল্ড রুডলফ ফোড জুনিয়র-৯ আগষ্ট, ১৯৭৪ থেকে ২০ জানুয়ারি, ১৯৭৭ পযন্ত দেশটির ৩৮ তম প্রেসিডেন্ট।) ফাস্ট লেডি হিসেবে বেটি ফোড সামাজিক নীতিমালাতে কাযকর ভূমিকা পালন করেছেন ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে রাজনৈতিকভাবে কাযকর হবার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার আগে তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পযন্ত আমেরিকার উপরাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। সামাজিক বিষয়াদিতে অনেক বেশি উদার হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ও অস্ত্রোপচারের আন্দোলন তৈরির জন্য খ্যাতিমান। সমান অধিকারের জন্য নীতিমালা সংশোধনের একজন আগ্রহী ও সচেষ্ট কমী। গভপাতের অধিকারের সমথক। নারী অধিকারের আন্দোলনগুলোতে একজন নেতা। সবচেয়ে বিখ্যাত ফাস্ট লেডিদের একজন-বেটি ফোড। সমবেতন ও নারীবাদের অন্যতম নেতা। যৌনতা, মাদক, গভপাত ও অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কমী আজীবন। মাদকাসক্তি ও গভপাতের বিপক্ষে জনসচেতনতা তৈরির আন্দোলন করেছেন দীঘকাল। তিনিই ১৯৭০ দশকে শুরু করেন প্রথম ফাষ্ট লেডি হিসেবে এই কাজ। হোয়াইট হাইজেও নারীবাদী আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন বেটি ফোড সেন্টার। তাকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলটি মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসামরিক পদক হিসেবে প্রদান করা হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে ১৯৯৮ সালের ২১ অক্টোবর। এরপর পেয়েছেন আরেকটি সেরা পদক প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম-১৯৯১ সালে।
তার চরিত্রাভিনেত্রী ‘মিশেল ফাইফার’ ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের মাকিন সবচেয়ে উবর অভিনেত্রীদের একজন হিসেবে বিবেচিত।
‘দি ফাস্ট লেডি’ হিসেবে আরো থাকবেন অ্যানা এলেনর রুজভেল্ট। মাকিন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাবেক কূটনীতিবিদ ও অধিকারকমী। ১৮৮৪ সালের ১১ অক্টোবর জন্ম নেওয়া নারীটি ইউনাইটেড স্টেটসের ফাস্ট লেডি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন, যখন তার স্বামী ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তাদের চার মেয়াদের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার ৩২তম এই রাষ্ট্রপ্রধান ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাকিনীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন মৃত্যুর আগ পযন্ত ক্ষমতায় থেকে। তার বিখ্যাত কূটনীতিবিদ স্ত্রীটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মাকিনীদের আলোচনায় ১৯৪৫ থেকে ১৯৫২ সাল পযন্ত দলপ্রধান। প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান পরে ‘ফাস্ট লেডি অব দি ওয়াল্ড’ হিসেবে তার মানবাধিকার কাযক্রমের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এলেনর রুজভেল্ট ১৯৬২ সালের ৭ নভেম্বর মারা গিয়েছেন।
তার ভূমিকায় থাকবেন জিলিয়ান অ্যান্ডারসন। জিলিয়ানকে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে তিনি নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিভি সিরিজ এক্স-ফাইলসে। নাম ডানা স্কালি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মাগারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দুবারের প্রাইম টাইম অ্যামি অ্যাওয়াড, দুটি গোল্ডেন গ্লোবের মালিক। চারবার পেয়েছেন স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়াড।
তিন সেরা অভিনেত্রীর মধ্যে একমাত্র ডেভিসই তখন গণমাধ্যমের সামনে ছিলেন। মিশেল ওবামা তার অভিনয় দেখতে পারেন-শোনার পর ‘এই কারণেই আমরা অভিনেত্রী হিসেবে বেঁচে থাকি’-বলেছেন তিনি।
এই তিনটি প্রধান চরিত্রই অ্যামির পবগুলোতে পুরস্কারগুলো জয়ের জন্য অবশ্যই মনোযোগ কাড়বে।
‘দি ফাস্ট লেডি’ সিরিজটির নিবাহি প্রযোজকরাও নারী-ক্যাথি শুম্যান ও সুজান বিয়ার। তারা প্রায় ১২০ বছর মাকিন প্রধান নারীদের জীবনে তুলে আনবেন।
‘দি ফাস্ট লেডি’র শুভ উদ্বোধন শুরু হবে ১৭ এপ্রিল রাত ৯টায়। প্যারামাউন্ট মিডিয়া নেটওয়াকসের শো টাইম টিভিতে।
ছবির ক্যাপশন : ১. মিশেল ওবামার চরিত্রে অভিনয় করছেন তার মতো আফ্রিকান-আমেরিকান একমাত্র অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার, প্রাইম টাইম অ্যামি ও দুটি টনি অ্যাওয়াড জয়ী ভাইওলা ডেইভিস
২. একটি গোল্ডেন, একটি ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়াড জয় করা মিশেল ফাইফার হবেন বেটি ফোড
৩. এক্স-ফাইলসের নায়িকা জিলিয়ান অ্যান্ডারসন হবেন অ্যানা এলেনর রুজভেল্ট
ওএস।