একুশে পদক প্রাপ্তিতে অভিনেতা আফজালের মনের কথা
বাংলাদেশের বিখ্যাত টিভি, মঞ্চ ও সিনেমা অভিনেতা আফজাল হোসেন এবারের একুশে পদক লাভ করেছেন। তিনি এই পদক লাভের পর ব্যক্তিগত অনুভূতি ও দিনলিপি শেয়ার করেছেন ফেসবুকে।
আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘খবরটা আমি জানতে পারি, দুপুর বারোটার দিকে। একটা মিটিংয়ে যোগ দিতে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে তখন ঢাকার বিজয় স্মরণিতে জ্যামে আটকা পড়ে। প্রথম শুনলাম-তা নয়। তার কদিন আগে কাছের একজন আচমকা ফোন করে খুব উত্তেজনা, আনন্দে বলেছিল, ‘আপনাকে বোধহয় এ বছর একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে। অপ্রস্তুত বোধ করি। এই খবর বিশ্বাস, অবিশ্বাস কোনোটিই করিনি। যে ফোন করেছিল তাকে বলি-ঠিক, বেঠিক যাই হোক, এই শোনা কথা আর কাউকেও বলবার দরকার নেই।’ ফলে কথাটি কানে এসেছিল, কানেই থেকে যায়। মনে ঢুকতে দেইনি।’ শোনা কথা আমলে নেওবার যুক্তি তো নেই। পেছনের কথা হলো, বহুদিন ধরে মানুষ বলাবলি করে। এসব প্রাপ্তির জন্য ভারী পরিচয়ের ব্যাক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা ও তদবিরও করা লাগে। সেসব বিচারে এ তো অধম অতি অযোগ্য। যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা যার মোটেও নেই-এমন সংবাদ শুনে তার তো চুপ হয়ে যাওয়ার কথা।’
এরপর লিখেছেন তরুণ প্রজন্মের নায়কদের আদশ উদাহরণ-‘সেদিন জ্যামের মধ্যে বসে বারবার ঘড়ি দেখছি, সময়মতো মিটিংটিতে পৌঁছাতে পারব কী পারব না-এই অংক কষতে, কষতে মনের ভেতরে ছটফট করছি। এমন সময় ফোনটি এলো। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানানো হলো।
জ্যাম ছুটে গেল। গাড়ি ছুটছে।’
তারপর? কী হলো বললেন সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত জুটির নায়ক, ‘মনাকে খবরটি জানাতে ফোন করি। পাই না তাকে। পেলাম যখন নিজে খবরটি বলার আগে অভিনন্দন পেলাম।’
অভিনন্দন বিষয়ে লিখেছেন চিরযৌবনের প্রতীক, 'তারপর আসতে শুরু করল ফোনের পর ফোন। ফোনেই শুরু হয়ে গেল অভিনন্দনের বৃষ্টি।’
সবচেয়ে ভালো লেগেছে পারলে না রুমকির নায়কের, ‘সবচেয়ে উল্লেখ করার মত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আমার ছোট বোন। ফোনে তার খুশি-আমি হাসির ধরণে টের পেলাম। ভাইয়ের রকম সম্পর্কে ও ভালো করেই জানে। তাই বিস্মিত হলো। প্রশ্ন করলো-কীভাবে হলো?’
সাধারণ ও অসাধারণ মানুষদের এই অভিনন্দন ও প্রতিক্রিয়াগুলোতে লেগেছে? ‘মনে হয়েছে, জীবন, মানুষ ও পৃথিবী সত্যিই খুব সুন্দর। আরো মনে হয়েছে, সবার উচ্ছাস, আনন্দ, উষ্ণতা, ভালোবাসাগুলো এমন আন্তরিক প্রকাশই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাপ্তি।’
এরপর রাজনীতি নিয়ে বলেছেন অনেক বছর ধরে মঞ্চ, টিভি ও সিনেমার প্রধান নায়কদের একজন, ‘কোনো কালেই রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনোরকম যুক্ত হওয়ার আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা ছিল না। আমার বিশ্বাস, সবাইকেই রাজনীতির মানুষ হতে হয় না। মানুষের কল্যাণ, দেশকে ভালোবেসে কর্তব্য পালন নিজ যোগ্যতা, সামর্থ অনুযায়ী রাজনীতি না করেও করা সম্ভব। তবে রাজনীতির সঙ্গে আমার ছোঁয়া, ছুয়ি নেই বলেই একশ্রেণীর মানুষকে কপালে ভাঁজ ফেলার আচরণ করতে দেখেছি। পেশায়ও একের পর এক হতাশ হওয়ার মতো ঘটনা যোগ হয়েছে। বিভিন্ন উপলক্ষে ইনিয়ে, বিনিয়ে বোঝানো হয়েছে, আমি ওপর মহলে অপ্রিয়, দোষী, মন্দ ও বিরোধীপক্ষ। এসব কথা হতাশ করে। অনেক সময় আহত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি আবার হেসেছিও। তবে মনে বিশ্বাস ছিল, সত্য নয়-এসব বানানো কথা। কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থরক্ষায় আবোল-তাবোল কথা ছড়িয়ে মনে ,মনে সুখ অনুভব করে। এমন ভেবে স্বস্তি খুঁজেছি, মিলেছে কিন্তু মনের অপর পিঠে তীব্র যাতনাও ছিল।’
সবশেষে বলেছেন তিনি, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ। কলমের খোঁচায় তিনি দুষ্টদের ওড়ানো ফানুসগুলো চুপসে দিয়েছেন।’
ওএস। (১০-২-২০২২ তারিখে লেখা)