শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ইবি উপাচার্যের অডিও ফাঁস, থানায় জিডি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এক প্রার্থীর সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের কথোপকথনের ৩টি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপাচার্যের নির্দেশে ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।
জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর জায়েদ বিপ্লব । তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিতে 'ফারহা জেবিন' নামের নামের একটি ফেইক আইডি থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) রাত ১০টায় ইবি ভিসির 'কণ্ঠসদৃশ' কথোপকথন প্রচারিত হয়েছে জানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার আবেদন করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত 'ফারহা জেবিন' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও পোস্ট করা হয়। এসব অডিওতে নিয়োগ নিয়ে ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে উপাচার্যকে বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়। তবে অডিওটিতে অন্য প্রান্তের কোনো কথা শোনা যায়নি। অডিওতে একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিল হওয়ার কারণ এবং আগামীতে বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও নিয়োগ প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন বলে দেওয়া হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের ঘটনা নিয়ে এ আলোচনা করা হয়। অডিওতে ওই বিভাগের অলি নামের (সংক্ষিপ্ত নাম) এক শিক্ষক প্রার্থীর নাম ধরে সম্বোধন করতে শোনা যায়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর উপাচার্যের কার্যালয়ে এবং তার সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনজন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারীরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অলিউর রহমান, মোহাম্মদ মোশররফ হোসেন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিউটি মন্ডল। তবে সর্বনিম্ন সংখ্যক প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর সেই নিয়োগের পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এদিকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সেই নিয়োগ বোর্ডটি অনুষ্ঠিত হবে বলে রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের প্রথম অডিওতে ওই চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের কারণ জানিয়ে বলা হয়, ‘বোর্ড ক্যানসেল হইছে এই কারণে, এই ইউনিভার্সিটিতে এখন পর্যন্ত দুই-তিনজন নিয়ে কোনোদিন হয় নাই। অ্যাপ্লিকেন্ট তিনজন হলে হয়ে যেত বুঝছেন? এই কারণে, অন্য কোনো কারণে না। আমরা এই ২৩ তারিখের পরেই আবার পুনঃবিজ্ঞাপনে যাচ্ছি। রিটেনে তো তিনজন আসেনি। হইছে দুইজন। তিনজন দিয়ে তো প্রথমে বোর্ড বসাইছিলাম। কিন্তু এতে যে দুইজন এটা তো ধারণাই ছিল না।’
নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠানের জন্য ওই প্রার্থীকে আরো প্রার্থী জোগাড় করতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ‘অন্তত তিনজন ক্যান্ডিডেট জোগাড় করতে হবে। পয়সা দিয়ে হলেও। এসব দায়িত্ব আমার, তোমরা অন্তত ভাই পরীক্ষাটা দাও। আপনি খালি তিনজন ক্যান্ডিডেট গোছান। তারা এপ্লাই করবে, আপনি পয়সা দিয়ে দেবেন। ওরা এখানে জাস্ট এপিয়ার করবে আর কিচ্ছু না। আপনি সব নিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন হবে দিয়ে দিবেন। তার ঠিক ২১ দিনের মাথায় বোর্ড বসায় দেব।’
ইউজিসির নিয়ম না মেনে হলেও নিয়োগে আশ্বস্ত করে বলা হয়, ‘এখন যেটা করবেন ইমিডিয়েটলি ৩০ তারিখের পরে হয়তো উইদ ইন অ্যা উইক বা উইদ ইন টেন ডেইজ আমি ঢাকায় যাবো। ঢাকা থেকে আসার পর অ্যাড হয়ে যাবে। আপনি এটাকে মিট আপ করে এখন যেটা আছে এমনকি ইউজিসির ওটাও আমি এই সিন্ডিকেটে নিবো না। ইউজিসির লেটেস্ট যে নিয়োগের নিয়মটা মানে এপ্লিকশনের যে যোগ্যতাটা, যাতে আপনি এপ্লাই করতে পারেন। বুঝছেন?’
১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের দ্বিতীয় অডিওতে ওই চাকরি প্রার্থীকে বেশ কিছু প্রশ্ন বলে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ১০টি চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জগুলো ইংরেজিটা করেন, এটা হয়তো কনটেমপোরারি বিষয়ে, পরীক্ষায় (থাকবে?)। আর খুব বেসিক কনসেপ্টস গুলা আছে না? কমিউনিকেশন এপ্রিহেনশন, তারপর গত পরীক্ষায় যা যা ছিল। রাইট টু ইনফরমেশন ও চ্যালেঞ্জগুলা ইংরেজিতে আর কি। এক লাইন, দুই লাইন করে ছোট ছোট করে। বুঝতে পারছেন?’
২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের তৃতীয় অডিওতে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনায় বলা হয়, ‘আমি তো আপনাকে সোর্সটাসহ দিয়েছি। দেখেন ওখানে। খুব চমৎকার করে একবারে চুম্বক লেখা আছে আর কি, ১০টা আইটেম। এ রকম ১০টা ইস্যু কি? এ রকম যদি কাউকে লিখতে দেয় তাহলে সেটার একটা ইংরেজিতে প্রস্তুতি রাখেন। এখন আমি এই টুক যা বললাম। আর ট্রেজারারের সঙ্গে একটু যোগাযোগ রাখেন। আচ্ছা যা হোক ওনাকে একটু বুঝায়ে বলেন। আর ওনাদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ করে আইসেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ভিসির নির্দেশনা অনুযায়ী জিডি করেছি। পুলিশ এখন তদন্ত করে বের করবে ফেক আইডিটা কার। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমানের সঙ্গে এ রকম কথা বলেছি।’
ভাইরাল হওয়া অডিও ফাঁসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বক্তব্যগুলো তার কি-না এ বিষয়ে সঠিক উত্তর দেননি।
এসআইএইচ