বশেফমুবিপ্রবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে পাঠদান বন্ধ, পরীক্ষা স্থগিত
জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেফমুবিপ্রবি) শিক্ষকদের কর্মবিরতিসহ লাগাতার আন্দোলনে ব্যাহত হচ্ছে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান। এতে পড়াশোনা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবিতে শিক্ষকদের এই আন্দোলন চলছে ১ নভেম্বর থেকে।
শিক্ষকরা কর্মবিরতিসহ লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সেমিস্টারের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাঁদের পড়াশোনা। শিক্ষাজীবন পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, উপাচার্য সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর জামালপুরের মেলান্দহের মালঞ্চ এলাকায় বশেফমুবিপ্রবিতে ভিসি হিসেবে যোগ দেন। আচার্য রাষ্ট্রপতির আদেশবলে নিয়োগ পাওয়া তার ভিসি পদের চার বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৮ নভেম্বর। সেদিন শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ছুটির দিন হওয়ায় ভিসির শেষ কার্যদিবস দাঁড়ায় বৃহস্পতিবারে (১৭ নভেম্বর)। ভিসি হিসেবে বিদায় নেওয়ার আগ মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণে একযোগে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত ৪৬ জন শিক্ষক।
এরপর ৮ নভেম্বর দুপুরে জামালপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন শিক্ষকরা। এ সময় ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্ত করে তার শাস্তির দাবি জানান।
এর আগে ১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টির সমাধানের লক্ষ্যে সব শিক্ষক ১০ দফা দাবি উল্লেখ করে ভিসিকে স্মারকলিপি দেন। তবে ওই স্মারকলিপি আমলে নেওয়া হয়নি জানিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। এরপর শুরু হয় কর্মবিরতি। ১৫ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম বর্জন করে আসছেন শিক্ষকরা। এর ফলে শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ফিশারিজ, সিএসই, ইইই, গণিত, সমাজকর্ম ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সব ক্লাস পরীক্ষা ও সব সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিশারিজ বিভাগের শেষ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পাঠদান ও পরীক্ষা চালু করার দাবিতে ছয়জনের একটি ছাত্র প্রতিনিধিদল ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাপতি ভিসির সঙ্গে দেখা করেন। এক পর্যায়ে ভিসিসহ বিভাগীয় চেয়ারম্যান পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে ১৬ নভেম্বর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু ১৪ নভেম্বর বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থীর কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম এ হুরাইরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধে প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। শিক্ষকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে আপনাআপনি এসব বন্ধ।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনিক ও একাডেমিক পর্যায়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা ভিসি স্যারকে ১০ দফা দাবিসহ স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তিনি দাবিগুলো মেনে নেননি। দাবিগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে। শিক্ষার্থীদের সাময়িক অসুবিধা হলেও ভিসিকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সবই বানোয়াট। আমি কোনো দুর্নীতি ও অনিয়ম করিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে বিগত চার বছর ধরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়েই তো কাজ করেছি। এত দিন তো কোনো সমস্যা হয়নি। আমি তো শিক্ষকদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে কিছু দাবি মেনেও নিয়েছি। আরো কিছু দাবি পর্যায়ক্রমে পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছি।’
এদিকে ভিসির অপসারণের দাবিতে বুধবার তাঁর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ভিসি সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এসআইএইচ