বিচার পাননি জাবি’র সাংবাদিক আল-আমিন হোসেন
লেখা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)’র জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-সাংবাদিক আল-আমিন হোসেনকে হলের গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো বিচার হয়নি। অভিযোগ অভিযুক্তদের বিচারে গড়িমসি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন গুরুতর নির্যাতনের ঘটনার বিচার অবশ্যই দ্রুত হওয়ার কথা।
এ মাসের ২ আগস্ট রাত প্রায় ১১ টায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ও সাংবাদিক আল-আমিনকে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে যান আটজন ছাত্রলীগ কর্মী। তারা তাকে টানা নির্যাতন করেছেন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলটিতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসেন।
তারা সবাই আল-আমিন ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের কথা শোনেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের মোবাইল রেকর্ড বিশ্লেষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
ওইদিন রাতেই আটকর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
পরদিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।
এরপর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তারা অনেকদিন পর ১৭ আগস্ট হল প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরপর প্রতিবেদন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত আট ছাত্রকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। অথচ এ ঘটনার পর ৫ আগস্ট মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী সজীব হাসানকে মারধরের ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের সাত কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।
২ আগষ্ট রাতেই নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে সেও নামমাত্র। কেননা এই ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছেন।
আল আমিন হোসেনের বিচার না হওয়ার ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র, ছাত্রীদের ভাষ্য, ‘ছাত্রলীগ কর্মীরা একে-অন্যকে মারধরের ঘটনায় প্রশাসন যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় কেনো নেওয়া হলো না? এখানে তাদের গাফিলতি রয়েছে।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাকিবুল রনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেছেন, ‘পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। কাজটি সম্পন্ন করতে লেগেছে ২ সপ্তাহ। সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্বিঘ্নে। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের পক্ষে প্রশাসনের অবস্থান থাকলে নির্যাতনের ঘটনাটির বিচার দ্রুত করা হত।’
এই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেছেন, ‘এই আটজনকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। এখনো বলবত আছে।”
আল-আমিন হোসেনের হল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেছেন, “আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। ডিসিপ্লিনারি বোর্ড বাকী সিদ্ধান্ত নেবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেছেন, “আমি যতটুকু জানলাম ২১ আগস্ট আমাদের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কবে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড বসানো যায় আমরা আলোচনা করব। এরপর বোর্ডে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকী ছবি।
ওএফএস।