জাবিতে শ্রেণিকক্ষ যেন সোনার হরিণ
দেশের চারটি স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দেশের একমাত্র এ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, জিমনেসিয়াম, সেমিনার, লাইব্রেরি, গবেষণাগার থাকলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসবের মাঝে অন্যতম সমস্যা শ্রেণিকক্ষ সংকট।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউট থাকলেও সেই তুলনায় নেই শ্রেণিকক্ষ। যেগুলো আছে সেগুলোও বিশ্বমানের সয়। কয়েকটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কাছে শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। তৈরি হচ্ছে সেশনজট।
বিভাগগুলোর নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ থাকলেও সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ৫ টি করে ব্যাচ অধ্যয়ণরত থাকলেও ক্লাসরুম রয়েছে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩টি। যার ফলে এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হতে না হতেই অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঐ ক্লাসরুমের দরজায় দাড়িয়ে ভিড় করেন। এতে ক্লাসরুমে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যেমন মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে তেমনি দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও অস্বস্তিবোধ করেন।
প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার করলেও একাডেমিক ভবন পায়নি আইন অনুষদ। নেই সেমিনার লাইব্রেরির সুবিধা ও আলাদা ডিন অফিস। পাঠদানের জন্য নেই নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ। সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে ধারে নেয়া একটি কক্ষ ও জহির রায়হান মিলনায়তনের দুটি কক্ষে চলে ৫টি ব্যাচের প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান।
বর্তমানে বিজনেস স্টাডিজ অনুষেদের অধীনে ৪ টি বিভাগ রয়েছে। চার বিভাগের ২০টি ব্যাচ অধ্যয়ণরত থাকলেও শ্রেণিকক্ষ রয়েছে সর্বসাকুল্যে ৯টি। বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের বর্তমানে ৫টি ব্যাচ অধ্যায়ণরত থাকলেও শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র ১টি। শিক্ষকদের কক্ষের পাশে বেঞ্চ বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ভ্রাম্যমাণ শ্রেণিকক্ষ। সেখানে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২০ জন। এসব বিভাগের কাছে শ্রেণিকক্ষ যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।
ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের। তাদের অভিযোগ পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় অন্যান্য বিভাগের থেকে পিছিয়ে পড়ছে তারা। বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল আবেদীন আকাশ বলেন, 'বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ৪টি ব্যাচ অধ্যয়নরত। শ্রেণিকক্ষ একটি হওয়াতে আমরা সময়মত ক্লাস করতে পারিনা। দেখা যায় শিক্ষকরা দ্রুত সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা করলেও শ্রেণিকক্ষ না থাকায় হয়ে তা সম্ভব হয় না। যে কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি অন্যদের থেকে'।
আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডীন তাপস কুমার দাস বলেন, '১০ বছর ধরে আমাদের বলা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ভবন দেয়া হবে। এতদিন যাবৎ আমরা শুধু আশ্বাসেই আছি। এটার কার্যকারিতা আমি দেখিনি। আইন অনুষদ একটি স্বতন্ত্র অনুষদ। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ভবনের ব্যবস্থা করবে'।
মাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, 'শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ না করে শিক্ষকদের জন্য আবাসিক কমপ্লেক্স, কর্মচারীদের জন্য টাওয়ার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীরা একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। প্রশাসন নিজেদের সুবিধামত গাছপালা কেটে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাকে ভবন নির্মাণ করছে'। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রথম ধাপে ৬ টি আবাসিক হল নির্মাণের পর দ্বিতীয় ধাপে শুরু হয়েছে ১৪ স্থাপনার কাজ। স্থাপনাগুলির মধ্যে রয়েছে নতুন প্রশাসনিক ভবন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, লাইব্রেরি, শিক্ষকদের জন্য আবাসিক কমপ্লেক্স, গেস্ট হাউস ইত্যাদি। তবে সে তালিকায় স্থান পায়নি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য একাডেমিক ভবন।
এএজেড