সামিয়া রহমানকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে ঢাবির চিঠি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের কাছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। এই টাকা দ্রুত পরিশোধের জন্য সামিয়াকে চিঠি দিয়েছে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আল্টিমেটাম দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকারের পাঠানো চিঠিটিতে বলা হয়েছে, সামিয়া রহমানের পাঠানো ৩১ মার্চ তারিখের পত্রের বরাতে এবং ২৬ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে দেনা-পাওনা সমন্বয় সাপেক্ষে গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে বিধি মোতাবেক আপনাকে আগাম অবসর (আর্লি রিটায়ারমেন্ট) গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় আপনার কাছে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা পাবে। সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বিধি মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই টাকার মধ্যে মূল বেতন বাবদ ৬ লাখ ৭ হাজার ৫৭৪ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, চিকিৎসা ভাতা বাবদ ১২ হাজার ৮'শ টাকা, গবেষণা ভাতা বাবদ ৪২ হাজার ৬৬৭ টাকা, অফ ক্যাম্পাস ভাতা বাবদ ৮ হাজার ৫৩৩ টাকা, বৈশাখী ভাতা ১৪ হাজার ২৪০ টাকা, উৎসব ভাতা ১ লাখ ৪২ হাজার ৪'শ টাকা, মোবাইল ভাতা ৯ হাজার ৬০ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি যদি পাওনা টাকা ফেরত না দেন তাহলে প্রভিডেন্ট ফান্ডে তার যে টাকা আছে সেই টাকা থেকে পাওনা টাকা কেটে নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেইস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
সেটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠার ‘হুবহু নকল’ বলে অভিযোগ উঠে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই অভিযোগ জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী অ্যাডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' বই থেকেও সামিয়া ‘নকল করেন’ বলে অভিযোগ উঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই শিক্ষকের বিষয়ে একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করলে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় পদাবনতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভায় সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদাবনতি দিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৩১ অগাস্ট ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এই শিক্ষক। এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলার মধ্যেই সামিয়া রহমান অবসর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন।
তবে গত ৪ আগস্ট গবেষণায় ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে আগের পদ অনুযায়ী চাকরি সংক্রান্ত সকল সুবিধা এবং আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এনএইচবি/আরএ/