জাবির উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন, শিক্ষকদের মাঝে বিভাজন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন আগামী ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদানকারী সিনেটরদের মধ্যে ৬৩ জন সিনেটরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণদের নিয়ে নির্বাচনে কোনও আইনি বাঁধা নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়াও এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রহিমা কানিজ।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মৌখিকভাবে নির্দেশ পেয়ে তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে জরুরি সিনেট সভায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৮২ জন সিনেটর অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মোট চারটি প্যানেলের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকরা এখনও প্যানেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ছাড়াও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মোট চারটি প্যানেল হওয়ায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ এর মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
অন্যদিকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদানকারী সিনেটরদের মধ্যে ৬৩ জন সিনেটরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণদের নিয়ে নির্বাচনে কোন আইনি বাঁধা নেই বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা ছাড়া ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই মৌখিক নির্দেশে নির্বাচন আয়োজন করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকদের একটি অংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ’বর্তমান উপাচার্য পুনরায় উপাচার্য হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামীপন্থী সকল শিক্ষকের মত না নিয়ে বিতর্কিতদের নিয়ে প্যানেল করতে যাচ্ছেন।’
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন, ’এখন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হলে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের থেকেই ৪টি প্যানেল তৈরি হবে। এ ছাড়াও বিদ্যমান সিনেটরদের মধ্যে ৬৩ জন সদস্যের মেয়াদ শেষ। এ অবস্থায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সমীচীন হবে না। তা ছাড়াও এ ধরনের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন, যা এখনও আসেনি, এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশও দেওয়া হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সাময়িক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্যানেল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতারের নেতৃত্বে একটি প্যানেল, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীরের নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেল এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মতিনের নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নূরুল আলমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার, জাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এ মামুন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নুহু আলম থেকে যেকোনো দুইজন থাকবেন।
রাশেদা আখতারের নেতৃত্বাধীন প্যানেলে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফি, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান থাকার জোর গুঞ্জন রয়েছে।
এ ছাড়াও সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের নেতৃত্বাধীন প্যানেলে সাবেক উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়াও সাবেক উপাচার্য এম এ মতিনের নেতৃত্বে আরো একটি প্যানেল হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. খালিদ কুদ্দুস বলেন, ‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে আমাদের সংগঠনের মধ্যে কোনও ধরনের আলোচনা হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা নেই ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে নির্বাচন আয়োজন এবং শোকের মাস আগস্টে নির্বাচন আয়োজন করা কতটা সাংঘর্ষিক হবে তা বিবেচনা করা উচিত ছিল।
সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ’বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাবির অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী ১১ (২) ধারা অনুসৃত হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু আগস্ট মাস শোকের মাস সেহেতু এ মাসে নির্বাচন আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। তবে আগামী ১২ আগস্ট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে-এমন সিদ্ধান্তে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত।”
সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ’উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে আমরা আলোচনায় বসিনি। তবে শীঘ্রই সংগঠনের সকল সদস্যদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্ধারণ করতে চাই। তাই আগামী ১২ আগস্ট জরুরি সিনেটে সিনেটরদের মতের ভিত্তিতে তিনজন উপাচার্য প্যানেলের নামের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। সেটা আচার্য মহোদয়ের কাছে পাঠানো হবে। আচার্য মহোদয় তিনজনের মধ্যে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নির্ধারণ করবেন।’
এসআইএইচ