বাজারে ফের ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও সরকার নির্ধারিত ওই দামে বিক্রেতারা ডিম বিক্রি করছেন না; বরং উল্টো বাজারে ডিমের দাম আবার বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে ডিমের ডজন (১২টি) আবার দেড় শ টাকা ছাড়াল। মাঝে দাম সামান্য কমলেও খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের এক ডজন ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও দেশের কয়েকটি ডিম উৎপাদন এলাকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারে ডিমের দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল মঙ্গলবারের বাজারদরেও। টিসিবি জানিয়েছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। তাতে ডিমের দাম পড়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা ডজন। এক সপ্তাহ আগে বাজারে ডিমের হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ছিল বলে জানিয়েছে টিসিবি।
রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কাঁঠালবাগান বাজারে ঘুরে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। তবে ১৫৫ টাকায় কিনতে হলে বড় বাজারে যেতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে বাদামি ডিম ১৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ১৬৫ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। বাজারে সাদা রঙের ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়।
সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১২ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সেই হিসাবে এক ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪৪ টাকা। কিন্তু বাজারে এই দাম পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। গত মাসের শেষের দিকে কোথাও কোথাও ১৪৪-১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হলেও বেশির ভাগ বাজারে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার আছে। এর একটি কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার। অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৯০ থেকে ১ হাজার ১৯৫ টাকায়। অবশ্য সাদা রঙের ১০০ ডিম পাইকারিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।
উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডিমের উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কমছে। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা মূলত এই দুই কারণকে দায়ী করছেন। এ নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ডিমের ডজন তৃতীয়বারের মতো দেড় শ টাকার গণ্ডি পেরোল। এক ডজন ডিমের দাম প্রথমবার দেড় শ টাকা ছাড়ায় গত বছরের আগস্টের শুরুতে।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, টানা বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় পাইকারি বাজারে ডিম কম আসছে। সে কারণে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাঁর মতে, ডিমের দাম কমাতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা ডিম দ্রুত আমদানি করে বাজারে নিয়ে আসতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশ দিয়ে আবার বাচ্চাও ফোটানো হয়।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। এরপর দুই দফায় আরও ১১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিম আমদানি হয়নি।