সিন্ডিকেটে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম লাগামহীন
ঈদের আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আদার ঝাঁজ। ঈদের আগের ১৮০ টাকার আদা ৩০০ টাকা কেজি। রসুনের দামও লাগামহীন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে কৃষকরা এসব বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে তা বিভিন্ন আড়তে ও মোকামে চলে গেছে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। এজন্য আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে।
তবে আড়ৎদাররা বলছেন, ঈদের পর আড়তে খুব বেশি দাম বাড়েনি। শ্যামবাজারে তা ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ফলন কম হওয়ায় ঈদের পর দাম বেড়েছে। ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা চলে গেলেও ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামের ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পেঁয়াজের দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ঈদের আগে ৪০ টাকা কেজি ভাল পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। সেই পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৬০ টাকা কেজি। তবে ফরিদপুরেরটা একটু কম দামে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে।
আদার দামও অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, আগে ১৮০ টাকা কেজি বিদেশি আদা বিক্রি করা হলেও তা ৩০০ টাকা কেজি। তারপরও লাভ থাকছে না। তবে দেশি আদা ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। যা ঈদের আগে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, রসুনের দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বিদেশি রসুন ১৬০ টাকা কেজি ও দেশিটা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কমবে কি?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কি বলব, আড়তে যেভাবে কিনি কিছু লাভ করে প্রতিদিন বিক্রি করি। তারা কমালে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।’
এ সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোসনা নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের আগেই তো ব্যপাকভাবে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল। তারপরও দাম বাড়েনি। কিন্তু এমন কি হলো যে ঈদের পর কেজিতে এত অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে? এটা অবশ্যই সরকারকে দেখা উচিৎ।
শুধু এই খুচরা ব্যবসায়ী নয়, কৃষিমার্কেটসহ অন্যান্য খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন, কৃষকের কাছে কোনো পেঁয়াজ নেই। বিভিন্ন মোকামে চলে গেছে। তারা বেশি দামে বিক্রি করায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।
খুচরায় হঠাৎ কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেলেও পাইকারিতে কতো বেড়েছে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাতৃভান্ডারের সজিব শেখ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের আগে কম দামই ছিলে। কিন্তু ঈদের ছুটির পর হঠাৎ শ্যামবাজারে বেড়ে গেছে। তাই আমাদেরও পাইকারিতে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাবনার ভালো মানের পেঁয়াজ ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি। যা ঈদের আগে বিক্রি করেছি ৪৩ টাকা কেজি। তরে ফরিদপুরেটা একটু কম দাম, ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদের আগে ছিল ৩৫ টাকা কেজি।
পাশের সালাম নামে অপর পাইকারি ব্যবসায়ীও জানান, দাম বেড়ে গেছে। বস্তা দেখিয়ে তিনি বলেন, পাবনার ভালোটা ৪৯ টাকা কেজি। ঈদের আগে তা ৪২ টাকা ছিল। তবে ফদিপুরেরটা কেজিতে ৫ টাকা কম ছিল।
এই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সোহাগও জানান, ঈদের আগে বিদেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে বেশি দামে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, দাম বেড়ে গেছে। আগের ১০৫ টাকার রসুন ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে, কৃষিমার্কেটের পাইকার মুন্সিগঞ্জ বাণিজ্যালয়, নিউ বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়সহ খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মালের সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম। খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কৃষিপণ্যের আড়ৎ শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ৎ বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঈদের পর পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম তেমন বাড়েনি। এবার ফলন কম হয়েছে। এজন্য কৃষকের পেঁয়াজ শেষ হয়ে আসছে। সরবরাহ কমছে। তাই দাম বাড়ছে। তবে এই বাজারে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন উদ্দিন বলেন, কোন বাজারে বেশি তা আমাদের দেখার বিষয় না। কত মন নেবেন, নেন। ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হবে। তবে আদা ও রসুন আমদানি করতে হয়। তাই ডলারের কারণে দাম একটু বেশি।
আরইউ/এমএমএ/