মামলা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না টয়লেট্রিজ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি
দেশে বহুল ব্যবহৃত ট্রয়লেটিজ পণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণহীন। কাঁচামালের দাম বাড়ছে এই অজুহাতে দেশের বাজারে প্রতি মাসেই বাড়ছে সাবান, শ্যাম্পু, গুড়া সাবান, কাপড় কাচার সাবানসহ এসব সামগ্রির দাম। নিত্য ব্যবহার্য এসব পণ্যের বাজারের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
নিত্যব্যবহার্য এসব পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছরের সেপ্টম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলার পরও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে থেমে নেই প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও সেই মামলার কোনো সুরাহা হয়নি এখনো।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিলিভারের বাজারজাত করা ১২০ টাকার হুইল গুঁড়া সাবানের দাম এখন ১৪৫ টাকা। ৫০ টাকার ১০০ গ্রামের লাক্স সাবান বর্তমানে ৬০ টাকা। ৮৫ টাকার ১ কেজির রিন ডিটাজেন্ট পাওডার সাবান ২০০ টাকা ও ৫০০ গ্রাম ৯৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে কম ছিল। ৩৫ টাকার ভিমবার ৪০ টাকা। ছোট মিনিপ্যাক শ্যাম্পুর দাম ২ টাকা ঠিক থাকলেও পরিমাণ কমানো হয়েছে। ৪৫ গ্রামের ক্লোজআপ পেস্ট আগে ৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। বড় ক্লোজ আপ (১০০মিলি) ১২০ টাকা থেকে বেড়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা।
শুধু এই কোম্পানি নয়, অন্যান্য প্রায় সকল কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
মোহাম্মদপুরের ফিউচার টাউন হাউজিংয়ের আল আমিন এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইউনিলিভারের সব জিনিসের দাম প্রতি নিয়ত বাড়ছে। এক, দুই টাকা নয়, কোনো কোনো জিনিসের দাম ১০ টাকা থেকে শুরু করে, ২০, ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেটের মনির স্টোরের আনোয়ার ও নিউ হক স্টোরের রাজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কিছুদিন পর পর ইউনিলিভার, এসিআইসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে আমাদেরকেও বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, ‘আগে যে হইল সাবান ২৫ টাকায় পাওয়া যেত সেটি এখন ৩২ টাকা হয়ে গেছে। ৫৫ টাকার বড় লাক্স ৭৫ টাকা, ৩৫ টাকার ভিমবার ৪০ টাকা, ৯২ টাকার হুইল ১৪২ টাকা, ২১০ টাকার সার্ফএক্সএল ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম বাড়লেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ করেন এই দুই ব্যবসায়ী।'
টাইনহল বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জসিম নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এভাবে চলা যায় না। দেখা যাচ্ছে গত সপ্তাহে যে দামে সাবান, ডিটারজেন্ট পাওডার কিনেছি, আজকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এভাবে আর কতকাল চলব। জুয়েল নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, যুদ্ধের অজুহাতে ইউনিলিভারসহ অন্যান্য কোম্পানি সব পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের বেতন তো বাড়েনি।
কারওয়ান বাজারের আলি স্টোরের আলি হোসেন ও আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের শাহ আলমও বলেন, ‘বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি হুহু করে বাড়ছে। ইউনিলিভারসহ অন্যান্য কোম্পানির সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের কি করার আছে।
সাবান, শ্যাম্পু, গুঁড়া সাবানসহ বিভিন্ন নিত্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বাধ্য হয়ে ইউনিলিভার, এসিআই লিমিটেড, স্কয়ার গ্রুপ, কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি (তিব্বত), কেয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। ওই সময়ে তাদের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো সঠিক জবাব দিতে পারেনি। এখনো সে সব মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়নি।
সাবান, শ্যাম্পুর মত নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম প্রতিযোগিতা করে বাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। অতিরিক্ত টাকা গুণতে গুণতে তারা রীতিমতো নাজেহাল।
এদিকে, প্রতিযোগিতা কমিশনে মামলার নিস্পত্তি না হলেও প্রায় পণ্যের দাম নিয়মিত বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীব রঞ্জন চক্রবর্তী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইউনিলিভার বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় মামলা হয়েছে। শুনানিও হয়েছে। তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো মামলা নিস্পত্তি হয়নি।
এদিকে, ইউনিলিভারসহ অন্যান্য কোম্পানি তাদের সকল পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করায় জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছেও অভিযোগ আসে গত বছরের সেপ্টেম্বরে।বাধ্য হয়ে ইউনিলিভার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তলব করা হয়। তাদেরকে চিঠি দিয়ে সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট, লিকুইড ক্লিনারসহ বিভিন্ন পণ্যের মূ্ল্যের ব্যাপারে জানতে চওয়া হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/