সিন্ডিকেটে বেড়েই চলেছে ব্রয়লার মুরগির দাম
বাজারে ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও মুরগির সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। তবে করলা, পটল ও ঢেঁড়সের দাম কমেছে। মজুত বাড়তে থাকায় ডাল, ছোলা, আদা, রসুন এবং পেঁয়াজও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৬০ টাকা
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশে হইচই পড়লে ভোক্তা অধিদপ্তর ফার্মমালিক থেকে পাইকারি ও খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীদের কাছে দামের ব্যাপারে জানতে চায়। খতিয়ে দেথা হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারও করা হয় এ খাতের ব্যবসায়ীদের। তারপরও বাজারে তার প্রভাব নেই।
এদিন, সপ্তাহের ব্যবধানে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে । চাঁদপুর কিচেন, মামা ভাগিনা, জননী মুরগি হাউজ, সততা কিচেন ও আল্লাহর দান কিচেন হাউজসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, কক ৩৬০ ও দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কিক্রি করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের বলে লাভ কী? গোড়া না ধরলে কমবে না। সরকার, ম্যাজিস্ট্রেট শুধু আমাদের ধরে। আমরা কী বেশি দাম নিতে পারি? দেশি দামেই কেনা। তাই বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
একইভাবে পাকিস্তানি মুরগির কেজি দাম বেড়ে ৩২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। আবার চাহিদাও বেশি। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম। তাই মুরগির দামও বাড়ছে।
গত সপ্তাহে গরুর মাংস ৭০০ টাকা বিক্রি করা হলেও এ সপ্তাহে কেজি ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে জনপ্রিয় মাংস বিতানের বিক্রেতারা জানান। তবে মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা কমে ১২০-১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।
আগের সপ্তাহের মতোই রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা জানান, রুই ও কাতলার কেজি ২৫০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০-১২০০ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড় ৫০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৩০০-৩৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০, কাজলি, বাতাসি ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ১৫০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ইলিশের দাম বেড়ে আকার ভেদে ১২০০-১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অঅর হাফ কেজির ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর মাছ শেষের দিকে। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
বাজারে মিলছে চিনি
বিভিন্ন অজুহাতে মিলমালিকরা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১১২ টাকা করেছে। তারপরও বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার পর অবশেষে রমজান মাসের আগে প্রায় সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে চিনি।
এ ব্যাপারে আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম, ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফসহ অন্যান্য মুদি ব্যবসায়ীরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগে চিনি রাখতাম না। কারণ মিল থেকেই দিত না। আবার দিলেও দাম বেশি রাখত। কিন্তু কয়েক দিন থেকে রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় পাওয়া যাচ্ছে জিনি। তাই আমরাও ১১২ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারছি।
আগের মতোই ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৮৫-১৮৭ টাকা, ২ লিটার ৩৭০-৩৮০ টাকা ও ৫ লিটার ৮৭০-৯০৫ টাকা, মসুর ডাল ৯৫-১৪০ টাকা কেজি, প্যাকেট আটা ২ কেজি ১৩০ টাকা ও খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে ১০০ থেকে ১৩৫ টাকা ও ছোলার দামও কেজিতে ৫ টাকা কমে ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য মুদি আইটেম এ সপ্তাহে বাড়েনি।
কমেছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম
দেশে বেশি পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। পাইকারিতে পাল্লা (৫ কেজি) ১৪০-১৬০ টাকা, খুচরা কেজি ৩০-৪০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি ১০০ টাকা, চায়না রসুনের দামও কমে ২৪০ টাকা কেজি, দেশি আদা ১১০-১৪০ টাকা ও বিদেশি আদা ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বিক্রেতারা জানান।
কমেনি চালের দাম
দেশে যথেষ্ট চালের মজুত থাকলেও কমে না চালের দাম। বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার চালের কেজি ৭২ টাকায় বিক্রি করা হলেও আকিজ, রূপচাঁদা, প্রাণ, সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির বস্তার মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ওই সব কোম্পানিরই ৫ কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৪ থেকে ৫০ টাকা, ২৮ ও পাইজাম ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
কমের দিকে করলা,পটল ও ঢেঁড়স
গ্রীষ্মকাল ঘনিয়ে আসায় করলা, পটল ও ঢেঁড়সের দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। টমেটো ৩০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-৪০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, শিমের কেজি ২৫-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকা, মুলা ও পেঁপের কেজি ২০-৩০ টাকা। শসা ও গাজরের দাম ৩০-৪০ টাকা, লাল ও পালং শাকের আঁটি ১০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে তবে ১০০-১২০ টাকা মরিচের কেজি কমে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
জেডএ/এমএমএ/