সিন্ডিকেট, করপোরেট ও অদৃশ্য এসএমএসে বাড়ছে মুরগির দাম
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, 'ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা হলেও তা ২৫০ টাকা কেজি কেন? এই মুরগির দাম বাড়ার কারণ সিন্ডিকেট, করপোরেট গ্রুপ ও অদৃশ্য এসএমএস।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সমগ্র দেশে অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে বাজার অস্থিতিশীল করছে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা তা খতিয়ে দেখব। পাইকারি ও খুচরা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব ) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কাজী ফার্মের প্রতি কেজি মুরগির পেছনে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তারা বিক্রি পাইকারি পর্যায়ে করছে ১৯০ থেকে ২০৭ টাকা। এত বেশি লাভ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এটাই কি তাদের আসল উৎপাদন খরচ না আরও কম, তা খতিয়ে দেখা হবে। তারপর সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দোকানে অবশ্যই মূল্যতালিকা থাকতে হবে, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বাজার কমিটিকে দায়ী করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা করতে হবে। যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল না করে।’
তিনি পোল্ট্রি মুরগির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে পোল্ট্রি মুরগির কেজি ২৫০ টাকা বিশ্লেষণ করার জন্য অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া, তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে মুরগির মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পোল্ট্রি মুরগির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষুদ্র খামারিরা করপোরেটদের সঙ্গে পারছেন না। তাদেরকেও টিকিয়ে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল না করার অনুরোধ জানান। তা ছাড়া, সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করে ভোক্তাদের সঠিক দামে সঠিক পণ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতেও তিনি অনুরোধ জানান।
অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আইন মেনে যৌক্তিক মূল্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
সভায় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। তারা করপোরেট কোম্পানিকে রাতেই দাম জানিয়ে একটি এসএমএস করেন। পরে সকালে করপোরেট কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএস মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন।
সুমন হাওলাদার আরও বলেন, ‘যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেয়। আর যখন আমাদের হাতে পণ্য থাকে না, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমাদের হাতে পণ্য নেই, এখন মুরগির কেজিপ্রতি দাম ২৫০ টাকা। সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়ায় অনেকে খামার বন্ধ করে রেখেছে এবং বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্রয়লারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে ব্রয়লারে মূল্য বেড়েছে। বাচ্চার উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্রয়লার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, ফিড ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি, বিভিন্ন বাজার সমিতির প্রতিনিধি এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, কাপ্তান বাজার সমিতিসহ বিভিন্ন বাজার সমিতির প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পাইকারি ও খুচরা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা।
জেডএ/এমএমএ/