‘দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, এখনো বাংলাদেশ কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি-এই তিনটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান কবে হবে সেটা কেউই বলতে পারবে না। বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ পণ্যদ্রব্যে মূল্য বেড়েছে, তাই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে সংকট মোকাবিলায় সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (৭ মে) আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব সব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আসছে সামনে। কারণ হলো সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এখন আগামীতে আমাদের পরিস্থিতি কী হবে তা সময় বলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শেষ দিকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য আইএমএফের শর্ত কতটুকু বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি হয়েছে তা দেখতে সম্প্রতি সংস্থাটির প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। আইএমএফ দলটি মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আইএমএফ ঘোষিত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে এবার আলোচনা হয়নি। আইএমএফ প্রতিনিধি দল তাদের শিডিউল সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপে সন্তুষ্ট। সংস্থাটি আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে দ্বিমত করেনি। আইএমএফ মিশন দল আগামী অক্টোবরে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসবে, তখন এ বিষয়ে জানা যেতে পারে।
আইএমএফের দেওয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও অনেক সময় রয়েছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, কিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জুন পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে। আবার কিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময় দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত। সুতরাং এ সময়ের মধ্যে সবগুলো শর্তই আমরা পূরণ করতে পারব। ইতোমধ্যেই ঋণের একক সুদ হার উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীতে সুদের হার গণনা করা হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে, যা আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মেজবাউল হক বলেন, ডলারের একক এক্সচেঞ্জ রেট প্রায় বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেই দরে ডলার বিক্রি করছে এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক যে দামে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় সংগ্রহ করছে তার মধ্যে পার্থক্য অলমোস্ট দুই শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, এই পার্থক্য ২ শতাংশের মধ্যে থাকলেই তাকে সিঙ্গেল এক্সচেঞ্জ রেট বলা হয়।
আমদানির ক্ষেত্রে সব গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংকগুলো সমান আচরণ করছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার দায়িত্ব গ্রাহকের। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ভূমিকা নেই। কোনো গ্রাহককে কম বা বেশি গুরুত্ব দিলে সেটা দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয়। তবে আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
সাড়ে সাত বিলিয়ন থেকে ইডিএফ ফান্ড ৫ বিলিয়ন ডলারে কমিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প তহবিল গঠন করেছি। এ কারণে রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
জেডএ/এমএমএ/