উচ্চাবিলাসী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতায় অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উচ্চাবিলাসী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই। তবে জনগণের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিতকরণে বিষয়টিকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।’
বুধবার (২২ মার্চ) প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। সভায় দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো দরকার।
এ ছাড়া, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংষ্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন দরকার। খেলাপি ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ, অবকাঠামো খাত ও জাতীয় লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণেও দীর্ঘমেয়াদী ফিন্যান্সিয়াল ম্যাপিং প্রবর্তন দরকার।
সেই সঙ্গে এলডিসি উত্তর সময়ে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চামড়া, পাট, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল সম্ভবনাময় খাতে আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদান দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংকের ডলারের সুদ হার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উদ্ভত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে আমাদের রিজার্ভেও উপর তেমন প্রভাব পড়েনি। আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজাটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বাড়ানোর আ্বান জানান।
এ ছাড়া, তিনি বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, এনবিআর নিজেকে কী ভাবে, জানি না। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করলেও এনবিআর যেভাবে চলছে তাতে ট্যাক্স বাড়ছে না, কমে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা জরুরি।
তিনি বলেন, জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আরও মনোযোগী হতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারি খাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে তিনি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানো দরকার বলেও জানান।
জেডএ/এমএমএ/