চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহার: সুবিধা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
গত কয়েক মাস ধরে চিনি নিয়ে রীতিমত হাহাকার চলছে। ক্রেতারা টাকা দিয়ে চাহিদামত চিনি পাচ্ছেন না। আর যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেটাও কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজারে সেই দামে কোনো চিনিই পাওয়া যায় না।
চিনির এই আকালের জন্য খুচরা বিক্রেতা থেকে পাইকারি পর্যায় পর্যন্ত সবাই দোষারোপ করছেন মিলমালিকদের। অভিযোগ, মিলমালিকরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছেন না। বরং রমজানকে সামনে রেখে চিনি মজুত করা হয়েছে। যাতে রমজানে বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করা যায়।
চিনির বাজারের এই হাহাকার নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত। তাই রমজানকে সামনে রেখে সরকার সাধারণ ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে বলে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে এনবিআর।
কিন্তু চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহারের এই সুবিধা কতটা পাবেন সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তারা। এ নিয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নানান মত।
ভোক্তা, খুচরা বিক্রেতা, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং ডিলাররা বলছেন, সরকার যে চিনি আমদানিতে শুল্কও প্রত্যাহার করেছে তার কিছুই জানেন না তারা। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা দিলেও বাজারে কখনই তার প্রভাব পড়ে না। শুল্ক প্রত্যাহারের পর আমদানিকৃত চিনি যখন বাজারে আসবে তখন দেখবেন এগুলো কারও মনে থাকবে না। ব্যবসায়ীরা ঠিকই তাদের লাভ বুঝে নেবেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আল আমিন ট্রেডাসের হাসান আলী বলেন, সরকার চিনিতে শুল্ক কমিয়েছে সেটা জানি না। কোম্পানি থেকেও কোনো লোক জানায়নি।
এ সময় কলাবাগান থেকে বাজার করতে আসা আনোয়ার নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার কমালেও আমরা জানতে পারি না। কিন্তু বাড়ালে ঠিকই সেই খবর জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘দ্যাহেন না ১১৫ টাকা দিয়ে এক কেজি খোলা চিনি কিনলাম। সরকার ঘোষণা করলেও কমে না। তা কমলেও অনেক সময় লাগে।’
চিনিতে শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাবেন কি না-জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী রায়গঞ্জ জেনারেল স্টোরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কিসের কম দাম। আমরা কিছু জানি না। কোম্পানির লোকও আজ আসেনি। কিন্তু দাম বাড়লে সকালেই বাড়তি দামের চিনি চলে আসত।’
দীর্ঘ দিনের দাম বাড়ানো কমানোর অভিজ্ঞতার আলোকে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘কোম্পানি হচ্ছে নাটের গুরু। তারা যা করে তাই হয়। তারা দাম বাড়ার আগে মাল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ঘোষণা করা মাত্র পরের দিন বাজার খালি হয়ে যায়। কিন্তু যদি কমে আর খরব থাকে না। ডিলাররাও জানতে পারে না। কয়েক দিন গেলে বলে আসবে আসবে।’
কারওয়ান বাজারের মেঘনা গ্রুপের ডিলার জামাল ট্রেডার্সের মো. জামাল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কই কিছু তো জানি না। কোম্পানি থেকেও কিছু বলেনি যে সরকার শুল্ক কমিয়েছে। চিনির দাম কমবে এমন খবর পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, আমরা তো চিপা গলিতে আছি। এখনো সহজে চিনি পাই না। খুচরা পর্যায়ে যে দাম সে দামে হলে দিতে চায় কোম্পানি। কিন্তু সে দামে নিয়ে আমাদের তো কোনো লাভ থাকে না। আবার বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা খেতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানি ঠিকমতো চিনি দিলে কোনো সংকট হবে না। তারা আমাদের দিলে আমরাও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে পারি। শুল্ক কমানোর সুফল ভোক্তারা পাবে কি না এটা কোম্পানির উপর নির্ভর করছে।’
শুধু কারওয়ান বাজার নয়, কৃষিমার্কেট, টাউনহল বাজারসহ বিভিন্ন পাড়া মহাল্লার খুচরা ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, সরকার চিনির উপর শুল্ক কমালেও সেটার সুফল সাধারণ ক্রেতা পাবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বর থেকে সরকার খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১১২ টাকা বিক্রি করেছে। কিন্তু এই দামে বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আসন্ন রমজানে বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে সুপারিশ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তা আমলে নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২৬ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারে একটি সার্কুলার জারি করে।
তাতে আমদানিকৃত অপরিশোধিত প্রতি টন চিনিতে ৩ হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনির জন্য প্রতি টনে ৬ হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/