ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে রমরমা চাঁদাবাজি
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুর ও মহাখালীতে চলছে চাঁদাবাজদের রমরমা ব্যবসা। ফুটপাত থেকে শুরু করে এসব চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজদের কারণে ছোটো খাটো সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
গোয়েন্দা একটি তথ্য বলছে, বর্তমান ফুটপাতের ব্যবসায়ী থেকে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী সবাইকে গুণতে হচ্ছে চাঁদা। আর এসব চাঁদাবাজরা এখন মোবাইল ফোনে কল রেকর্ডের ভয়ে চাঁদা চায় না। এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তারা। যার কারণে চাঁদা দেওয়ার তথ্য প্রমাণ থাকছে খুবই কম।
সম্প্রতি ঢাকাপ্রকাশের এক অনুসন্ধানে চাঁদাবাজদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। ওই অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকাতে সব চেয়ে বেশি চাঁদাবাজের ঘটনা ঘটছে মহাখালী এলাকায়। গোয়েন্দা একটি তথ্য বলছে, গুলশান বনানীর পাশে কড়াইল বস্তি হওয়ায় এখানে চাঁদাবাজদের ভয়ংকর উৎপাত রয়েছে।
মহাখালীতে ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি এলাকায় মানুষ জিম্মি করে হাসান ও হোসেন নামে দুই ভাই চাঁদা নেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কয়েকবার পুলিশের হাতে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এ এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী।
মহাখালী আমতলী মোড়ে জুতার দোকানদার মামুন বলেন, সারা বছর তেমন কোনো ব্যবসা নেই, ভাবছি এবার ঈদের সময় ভালো বেচাকেনা হবে। বেচাকেনা মোটামুটি আছে তবে, ধাপে ধাপে চাঁদা দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেলাম।
চাঁদা দেন কেন, কাকে দিতে হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদা না দিলে আমাদের পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পাতি নেতারা ব্যবসা করতে দেবে না। এজন্য বাধ্য হয়ে চাঁদার টাকা দিচ্ছি।
মহাখালী এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহাখালী ওয়ারলেস থেকে শুরু করে নকড়াইল বস্তির আশেপাশের দোকান থেকে সব চাঁদার ঢাকা তোলেন বস্তির সরকার দলীয় পরিচয় দেওয়া নায়েব আলী, জুনায়েদ, সোহাগ, ফরিদ ও সানোয়ার। বস্তির নেতা রিকশাচালক ও অবৈধ পানি-বিদ্যুতের ব্যবসায়ী চাঁদাবাজ ফুরকানকে পুলিশ মামলা দেওয়ার পর কিছু দিন এসব চাঁদা বন্ধ ছিল। বর্তমানে এ ছয়জনের সমন্বয়ে মহাখালী এলাকায় বেশিরভাগ চাঁদা উত্তোলন করা হয়।
কথা হয় মিরপুরের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আনোয়ার বলেন, ঈদ এলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে যায়। রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় লোকজন আমার কাছ থেকে অনেক টাকা চাঁদা নিয়েছে। এখন আবার ঈদের খরচ চান তারা।
মিরপুর পল্লবী ট্রাভেলস কোম্পানির মালিক ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'স্থানীয় কিছু পাতিনেতা প্রায় প্রতিদিন আমার অফিসে আসছে। বলছে ঈদের কিছু খরচ দেন। এ এলাকায় ব্যবসা করি ঝামেলার কী দরকার এজন্য অফিসে আসার পরে তাদের চাঁদার টাকা দিচ্ছি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় পুলিশ ও পেশাদার চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা এখন অতিমাত্রায় সক্রিয়। তবে কিছু পুলিশ চাঁদাবাজির কৌশল পরিবর্তন করেছে তারা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার করছে। এরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন খাত থেকে নিত্যদিন চাঁদা তুলছে। এসব খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অস্থায়ী কাঁচাবাজার, অস্থায়ী খাবার দোকান, বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ যানবাহন, রাস্তা ও ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো দোকানপাট। ঈদ সামনে রেখে এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা মুখোমুখি অবস্থান করছে।
জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বলেন, মহাখালীতে চাঁদা নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। যদি কেউ অভিযোগ করলে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাই ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে। যদি কোনো পুলিশের সদস্য এসব চাঁদাবাজদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে বা করছে এমন তথ্য পাওয়া গেলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে যদি কোনো ব্যবসায়ী হয়রানির শিকার হন অথবা চাঁদাবাজদের খপ্পরে পড়ে তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজদের ধরতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা যাবে না, যদি কেউ হয়রানি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় তাকে অভিযোগ করতে হবে। থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, সে বিষয়ে তারা আইনগত পদক্ষেপ নেবে। এবার ঈদে রাজধানীতে কোনো প্রকার চাঁদাবাজদের আশ্রয় দেওয়া হবে না।
কেএম/এসএন