ভাড়াটিয়ারা যাবে কোথায়!
গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এবার বাড়বে বাড়িভাড়া। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হলে বাড়িভাড়া বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোতে মনোযোগ দেওয়া হলেও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশিষ্টদের। ফলে রাজধানীতে বাড়িভাড়ায় নৈরাজ্য চলছে দশকের পর দশক ধরে।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। ঢাকা শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে ৯০ শতাংশের উপরে ভাড়া থাকে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই।
সম্প্রতি রাজধানীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। বিশেষত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইতিমধ্যে এলক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) অগ্রসর হচ্ছে।
এর ফলে ঢাকার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়লেই বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেবেন বাড়িওয়ালারা।
আগে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ১৮ টাকা ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করত সিটি করপোরেশন। এখন ২৪ টাকা ধরে ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে।
বিষয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বুধবার (৩০ মার্চ) নিশ্চিত করেছেন। প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ২৪ টাকা ধরে তার উপরে ১২ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, প্রতি বর্গফুটের ভাড়া বাড়িওয়ালারা আগে থেকেই ১৮ টাকার অনেক বেশি নিতো। এখন সরকারিভাবেই যখন প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ১৮ টাকা থেকে ২৪ টাকা করা হবে তবে বাড়িওয়ালারা ভাড়া আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এ ব্যপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে। তাতেও কাজ হচ্ছে না। একটা আইন আছে। সেটা সংশোধন করা যায়। সে ব্যপারেও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আর এগোয়নি।
ক্যাব সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়লে বাড়িভাড়া তো বাড়াতে চাইবেনই বাড়িওয়ালারা। এ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। ঢাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কিন্তু বাড়ির সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। এই সুযোগটাই মূলত বাড়িওয়ালারা নিচ্ছে।
মগবাজারে দেড় রুমের ছোট্ট ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন আসলাম রহমান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। ৩৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরিজীবী আসলাম রহমান বলেন, যে অবস্থায় থাকি শিক্ষিত মানুষের পক্ষে এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা সম্ভব নয়। সর্বক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে কমাতে এখন আর কমানোর জায়গা নাই। তাতেও পেরে উঠছি না।
আসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেড় রুমের ছোট্ট এই ফ্ল্যাটের ভাড়া সাড়ে ১১ হাজার টাকা। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ চলে যায় আরও দুই হাজার টাকার বেশি। শুনছি গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের বিলও বাড়বে। তাহলে তো বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হবে। বাজারেও সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে।
আরইউ/এমএমএ/