চবিতে দুই শিক্ষার্থীকে হেনস্তায় চার শিক্ষার্থী বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যৌন নিপীড়ন সেলে থাকা আরো দুই অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছে। সোমবার (২৫ জুলাই) চলমান বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান চবি রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত এস এম মনিরুল হাসান।
বহিষ্কৃতরা হলেন, আরবি বিভাগের জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রুবেল, দর্শন বিভগের ইমন ও একই বিভাগের রাজু। চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চবি রেজিস্ট্রার বলেন, যৌন নিপীড়ন সেলে থাকা ৩টি অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীর অভিযোগে অভিযুক্তদের সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়া যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্তদের ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৭ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ও ২১ জুলাই দিনে দফায় দফায় বিক্ষোভ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি বেধে দেয়।
দাবি মেনে নিল কতৃপক্ষ : শিক্ষার্থীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ত্বরিত পদক্ষেপ ইতোমধ্যে আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরছি।
শিক্ষার্থীদের ১ নং দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় প্রশাসনের গৃহীত ত্বরিত ব্যবস্থা সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও অন্য একটি সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ছাত্রীদের রাত ১০:০০ টার মধ্যে হলে প্রবেশের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চবি প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না থাকলেও এ সিদ্ধান্ত ২০ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা ঘটে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আনুমানিক দুই শতাধিক ছাত্রী ২০ জুলাই রাত ১০:০০ টায় নিজ নিজ হল থেকে বের হয়ে ভিসির বাংলোর সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। অথচ চবি প্রশাসন এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত আদৌ নেয়নি বা অফিসিয়াল নির্দেশ প্রদান করেনি।
শিক্ষার্থী ২ নং দাবীর পরিপেক্ষিতে , বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হরানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা ২০০৮" এর ৫.২ ধারা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি "যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র" আছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের
ঘটনার জন্য একটি 'অভিযোগ কমিটেও আছে। অধিকন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাক্ট অনুযায়ী গঠন করা আছে একটি ডিসিপ্লিনারি কমিটি'। শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে যৌন নিপীড়ন সেল সক্রিয় করার জন্য ছবি 'যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধ কেন্দ্র' ইতোমধ্যে পুনর্গঠন করা হয়েছে। তাছাড়াও 'অভিযোগ কমিটি' পুনর্গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ৩ নং দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের কাছে বিবেচনাধীন অনিস্পন্ন ৬টি অভিযোগ বিগত ২১ ও ২৩ জুলাই ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ৪নং দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, যে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনা ঘটে তার পর চবি প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে সব হলের প্রভোস্ট, রেজিস্ট্রার, ছাত্রছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক এবং প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়ে জরুরি সভায় মিলিত হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসন দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার শর্ত সাপেক্ষে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করেছে । অপরদিকে আমরা যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে "শূন্য সহিঞ্চুতা" ঘোষণা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছিল , ৪ কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত কমিটি ভিকটিম এবং ভিকটিমের বন্ধুর সাথে কথা বলে ২ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। চবি প্রশাসনের ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে তদন্ত কমিটি গঠনের ১ কার্য দিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এ্যাক্ট অনুযায়ী গঠিত " ডিসিপ্লিনারী কমিটি" কর্তৃক এ ঘটনার সাথে জড়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত অন্য প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান করেছেন।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নতির লক্ষ্যে ক্যাম্পাস ব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তা ও স্থাপনায় পর্যাপ্ত লাইটিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা প্রহরীর সিফটিং ডিউটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এএজেড