জুনের মাঝামাঝি বাজারে আসছে রংপুরের হাড়িভাঙা আম
জুনের মাঝামাঝিতেই রংপুরের হাড়িভাঙা আম বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে ঘন-ঘন বৃষ্টি হওয়ায় এবার আগাম আম পাকতে পারে।
চলতি মৌসুমে আমের প্রচুর মুকুল এলেও দফায় দফায় ঘূর্ণিঝড় ও শিলা বৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা।
মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জের আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে সবুজ পাতার মাঝে ঝুলছে আম। দোল খাচ্ছে বাতাসে। বাগানে বাগানে চলছে শেষ সময়ের পরিচর্যা। কেউ ভিটামিন স্প্রে করছেন কেউ কেউ পোকা দমনে স্প্রে করছেন বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক। গতবারের চেয়ে এবারে ফলন কম হলেও প্রায় সবমিলিয়ে ২০০-২২০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন অনেকেই বাগান কেনার জন্য। মৌসুমি আম ব্যবসায়ী কিংবা অনলাইনে যারা কেনাবেচা করেন তারা এসেছেন বাগান দেখার জন্য। অনেকেই বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করছেন হিসেব-নিকেশ। আঁশবিহীন ও অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এ আম অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুরুতে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ হতো। হাড়িভাঙ্গা আমের জনপ্রিয়তার কারণে এখন রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সদর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এ আমের বাগান। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এসব বাগান। এ বছর এ আমের আকার কিছুটা ছোট ও ফলন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
কম ফলনের কারণ হিসেবে চাষিরা জানান, এ মৌসুমে আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টি আর ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম দফায় মুকুলগুলো ঝরে যায়। দ্বিতীয় দফায় আবারও ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে পরে গুটি আমেরও একটি অংশ ঝরে যায়। এ ছাড়া রমজান মাসে রোজা ও ঈদের ব্যস্ততায় বাগান পরিচর্চায় কিছুটা অবহেলা হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার ফলন কম হয়েছে। তবে যারা সঠিক পরিচর্যা করেছেন, সময়মতো ভিটামিন ও কীটনাশক স্প্রে করেছেন তাদের আম ভালো হয়েছে।
জেলার মিঠাপুকুর খোড়াগাছ ইউনিয়নের আম চাষি রওশন আলী জানান, এবার ভালোই ফলন এসেছিল কিন্তু অর্ধেক আমই নষ্ট হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে। এখন অবশিষ্ট আম যাতে আকারে বড় হয় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। আম বাজারে আসতে প্রায় এক মাস বাকি আছে। এ এক মাসে পরিচর্যা করে আমের আকার বড় করতে পারলে লাভ হবে। এজন্য সরকার নির্ধারিত সময়ে আম বাজারজাত করা দরকার।
আম চাষি রাঙ্গা মিয়া জানান, তার এবার আমের কম ফলন হয়েছে। তিনি অবশ্য তার পরিচর্যার ঘাটতির কথা স্বীকার করেন। গত বছর ফলনও বাম্পার হলেছিল, লাভও ভালো হয়েছিল, এবার লাভ হবে না। সময় মতো আম বাজারজাত করতে পারলে হয়তো ক্ষতি কম হবে।
আম চাষি আব্দুর রউফ জানান, প্রায় ৬-৭ বছর ধরে আম চাষ করে আসছেন। সময় মতো পরিচর্চার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তবে ভিটামিন ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবারে ব্যয় বেশি হয়েছে। আমে সেই অনুযায়ী দাম না পেলে লাভ হবে না।
মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জের আম চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর তিনি আগাম বাগান বিক্রি করে দেন। এবারেও ১ লাখ টাকায় চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। দুটি বাগান নিজেই দেখভাল করছেন। কম ফলন হলেও লাভ হবে বলে তিনি জানান।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ২০০-২২০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা স্থানীয় আম চাষিদের। তবে আগামীতে আবহাওয়া ভালো থাকলে হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম দেশ-বিদেশে সরবরাহে এখনই প্লাস্টিকের ক্যারেট, সুতলি, খাঁচা, পেপারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারের এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। গত বছর এসময় বাংলা ক্যারেট ৭০-৮০ টাকা হলেও এখনই ১০০ টাকা, ভালো মানের ক্যারেট গতবার ৯০-১১০ টাকা হলেও এবার ১২০-১৫০ টাকা। বেড়েছে সুতলী ও পেপারের দাম।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেছেন, এবার ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ফলন কম হলেও হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন আম আসবে বলে আমা করা হচ্ছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জুনের শেষ সপ্তাহে ভালোভাবেই বাজারে আম পাওয়া যাবে। সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারজাত না করার জন্য আম চাষিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগাম লাভের আশায় আম বাজারজাত করলে হাড়িভাঙ্গা আমের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না।
এসএন