নাজিরপুরে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৫০ লাখ টাকার লিচু
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুরের লিচুর হাটে এখন প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার লিচু। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত প্রতিদিন ওই হাটে লিচু কেনা-বেচা হবে। এবার ২৪ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ মনে করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালু মোল্লা লিচু মোকামে জমজমাট লিচুর বেচা-কেনা চলছে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ব্যাপারিরা। ভ্যান-রিকশায় করে ঝুড়িতে ভরে লিচু নিয়ে আসছেন স্থানীয় কৃষক ও বাগানিরা।
আড়ৎ কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান, লিচুর ওই হাটকে কেন্দ্র করে আড়ৎ রয়েছে ১৭টি। চলতি মৌসুমে ওই মোকামের ডাক হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। গত রবিবার থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা চলছে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, প্রায় ১৫ বছর থেকে ওই মোকামে চলছে লিচু কেনা-বেচা। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলা এ হাটে ব্যাপারি, কৃষক ও বাগানিদের সার্বিক সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। লিচু বেচা-কেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন।
মক্কা-মদিনা আড়ৎ, মোহনা ফল ভাণ্ডারসহ বিভিন্ন আড়তের সামনে লিচুর দাম হাঁকছেন লিচু চাষি ও আড়ৎদাররা। প্রতিটি আড়তের ভেতর চলছে প্যাকেজিং। অপরদিকে ট্রাকে লিচু লোড দিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আড়তদাররা জানান, গত ৮ তারিখ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলা ওই লিচু কেনাবেচায় প্রতিটি আড়তে গড়ে ৫০-৬০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
স্থানীয় বিয়াঘাট এলাকায় লিচু চাষি আক্কাস আলী সরদার জানান, তিনি তার ৮ বিঘা জমিতে ২০০টি লিচুর গাছ লাগিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যেই গাছ থেকে লিচু বিক্রি শুরু করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের লিচুর আঁটি (বীজ) একটু বড়, শাঁস কম আর আকারে একটু ছোট হয়েছে। একারণে দাম কম পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ১ হাজার লিচুর দাম চলছে।
লিচুর ব্যাপারি আহসান হাবিব জানান, তার নিজের টাকায় ৭টি বাগান কেনা হয়েছে। এ সাতটি বাগান থেকে লিচু আহরণ, প্যাকেজিং ও বিক্রির কাজে সহায়তার জন্য ২০০ শ্রমিক রয়েছেন। তার বাগানের লিচু ঢাকা, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। বাগানের লিচু বিক্রি করে পর্যাপ্ত লাভের আশা করছেন তিনি।
অপর লিচু ব্যবসায়ী রফিক জানান, তিনি একজন লিচু ব্যবসায়ী পাশাপাশি আড়ৎ মালিকও। তিনি উপজেলার নারায়ণপুর চিকুর মোড় এলাকায় লিচু কেনেন। তার নিজের বাগানও রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৫ লাখ লিচু নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনীসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকে করে পাঠাচ্ছেন তিনি। লিচু কেনাবেচা করে ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনার রশিদ জানান, চলতি মৌসুমে মোট ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। মোট লিচুর বাগানের সংখ্যা ২০৫টি। চলতি মৌসুমে তিন হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ২৪ কোটি টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ৮ মে থেকে নাজিরপুর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর এলাকায় দেশের অন্যতম লিচুর হাট খ্যাত কালু মোল্লার বটতলার লিচু মোকামে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে।
এসএন