সাতক্ষীরায় বোরো ধানে ব্লাস্ট, দিশেহারা কৃষক
সাতক্ষীরায় ব্লাস্টরোগের প্রাদুর্ভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের শীষ। এ রোগের আক্রমণে গোড়া থেকে কালো হয়ে ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। এতে জেলার শত শত বিঘা জমিতে ব্যাপক ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর, আমতলা, ঝাউডাঙ্গা, উত্তর দেবনগর, আখড়াখোলা, তুজুলপুর, মাধবকাটি, রামেরডাঙা, কুখরালী, শিবপুর, তালা উপজেলার খলিষখালী, দোলুয়া, খেশরা, মুড়াগাছা, পাটকেলঘাটা থানার কুমিরাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেতে এই রোগটি দেখা দিয়েছে।
আক্রান্ত জমি থেকে ধীরে ধীরে আশপাশের জমিগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজ না হওয়াতে ভয়াবহ ফলন বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, 'গত বছরের ব্লাস্টে আক্রান্ত ধানের বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করার ফলে এই রোগ দেখা দিয়েছে।' তবে কৃষকরা মনে করছেন, 'দিনে গরম, রাতে শীত ও সকালে কুয়াশার ফলে এ ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে।'
জেলার একাধিক কৃষক জানান, 'বোরো আবাদ শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তেমন কোনো রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি। কৃষকরা ভালো ফলনের আশা করেছিল। কিন্তু ধানে শীষ ধরার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কোনো প্রকার ওষধে কাজ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।'
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের হযরত আলী জানান, 'চলতি মৌসুমে তার চার বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চারদিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোনো চাল নেই। মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় শীষের সবকটি ধানই চিটে। এতে কোনো চাল নেই।'
তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার থেকে পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান গাছে ওষুধ ছিটিয়েছি। কিন্তু এর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও ব্লাস্ট রোগ কমছে না বরং ধান গাছ আরও বেশি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।'
তালার মুড়াগাছা গ্রামের কৃষক আজিজ মোড়ল বলেন, 'তিন বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন তিনি। অধিকাংশ ধানের শীষ বের হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে থেকেই পাতা ব্লাস্ট রোগে গাছ সাদা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করেও কোনো লাভ হয়নি।'
তিনি বলেন, 'শীষ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধান গাছও মরে যাচ্ছে। আগে এ ধরনের আক্রমণ হলেও এত ক্ষতি হয়নি।'
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, 'ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণের কথা জানতে পেরে কৃষি উপসহকারী অফিসারদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্লাস্টের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষকদের সর্তক করা হচ্ছে।'
তিনি দাবি করেন, 'গত বছরের ব্লাস্টে আক্রান্ত ধানের বীজ সংগ্রহ করে চলতি মৌসুমে রোপণ করার কারণে এই রোগ দেখা দিয়েছে। আমাদের পরামর্শে কৃষকরা স্প্রের মাধ্যমে নাটিভো, ট্রুফার ও ফিনিয়া ব্যবহার করে ভালো সুফল পাচ্ছেন।'
টিটি/