কুষ্টিয়ার সড়কদ্বীপে পাপড়ি মেলেছে দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী!
ফসলের মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুলের হলুদ সমারোহ দেখা যায় হরহামেশায়। আবার কিছু মানুষ শখের বসে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নিজ বাগানে লাগান সূর্যমুখী ফুলের গাছ। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটেছে কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ার শহরের ব্যস্ততম সড়কের মাঝের সড়কদ্বীপে লাগানো হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের গাছ। এই ফুল ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষকে দিচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের তৃপ্তি।
কুষ্টিয়া শহরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক (এনএস রোড)। কয়েক বছর আগে এ সড়কের মাঝ দিয়ে সড়ক বিভাজক (সড়কদ্বীপ) নির্মাণ করে কুষ্টিয়া পৌরসভা। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এই সড়ক বিভাজকে স্থাপন করা হয় সুদৃশ্য খুঁটি ও রঙিন বাতি এবং এর মাঝ দিয়ে লাগানো হয় বাহারি সব ফুলের গাছ। যত দিন যাচ্ছে ততোই এই সড়কের সৌন্দর্য বেড়েই যাচ্ছে। সড়ক বিভাজকের রঙিন আলোর ঝলকানি আর নানা ফুলের ঘ্রাণের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যমুখী ফুলের হলুদের ছোঁয়ায় রাতের এ সড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।
বাহারি রকম ফুল গাছের সঙ্গে এই সড়ক বিভাজকে এ বছর বপন করা হয় সূর্যমুখী ফুলের বীজ। সেই বীজ থেকে চারা গজিয়ে এখন পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করে মাথা উঁচু করে হলুদ পাপড়ি মেলে নিজেকে জানান দিচ্ছে। কৃষকের ক্ষেতের চাষের এই সূর্যমুখী ফুল শহরের সড়ক বিভাজকে দেখে আনন্দিত ইট-পাথরের শহরে বসবাস করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বঞ্চিত শহরবাসী। সূর্যমুখী ফুল দেখে খুশি এই সড়কের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা চলাচলকারীরাও। প্রতিদিনই এই সড়ক বিভাজকের ফুল ও হরেক রকমের রঙিন বাতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন বহু মানুষ।
শহরের মধ্যে নানা রকম ফুলগাছ লাগানোর ফলে এসব গাছ শহরের কার্বন শুষে নিয়ে অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মানুষের বিনোদনের একটা বড় মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক কার্যকর ভূমিকা রাখছে এমনাটাই মত পরিবেশ কর্মীদের। প্রথম বারের মতো শহরের সড়ক বিভাজকে সূর্যমুখী ফুল ও গাছ দেখে উচ্ছ্বসিত নতুন প্রজন্মের শিশু, কিশোরেরা।
অনেক সচেতন অভিভাবকই নিজের সন্তানদের এই সড়কে নিয়ে যান সূর্যমুখী ফুলের সাথে পরিচয় করাতে। অনেকই মনে করেন, শহরের পড়ে থাকা জায়গাগুলোতে এমন ফুলের বাগানের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে শহরের সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেলের চাহিদা অল্প পরিমানে হলেও মেটানো সম্ভব।
সন্তান নিয়ে ঘুড়তে আসা অভিভাবক দিলরুবা পারভীন বলেন, বাচ্চারা শহরের ইট-পাথরের মধ্যে থাকতে থাকতে প্রকৃতির অনেক সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এখানে সূর্যমুখী ফুল দেখাতে নিয়ে এসেছি। ও এর আগে কখনো সূর্যমুখী ফুল দেখেনি। ফুল দেখে আমার বাচ্চা খুব খুশি হয়েছে।
কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানসিম জান্নান বলে, আমি এর আগে কখনো সূর্যমুখী ফুল দেখিনি। এই রাস্তার ডিভাইডারে প্রথম দেখছি। আমার অনেক বান্ধবীই সূর্যমুখী ফুল এখানেই প্রথম দেখেছে। ফুলগুলো দেখতে দারুন!
কুষ্টিয়া পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ রানভির আহমেদ বলেন, শহরের মানুষ যেন এক দিকে ফুলের সৌরভ পায়, অন্য দিকে পরিবেশের কার্বন ও অক্সিজেনের যে ব্যালেন্স, সেটিও থাকে। সে জন্যই সড়ক বিভাজনে ফুলগাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, মানুষ যাতে শহরে এসে এর সৌন্দর্য নিতে এবং সেইম টাইম যাতে মানুষের মানসিকতা পরির্বতন হয় এখানে। সেজন্যই শহরের সড়ক বিভাজনে ফুল গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। আমরা চাই, শহরের প্রতিটা বাড়িতে ফুলগাছ থাকুক।
এমএসপি