দর্শক সংকটে বন্ধ সিরাজগঞ্জের সব সিনেমা হল
মানসম্মত সিনেমা নির্মাণ না হওয়ায় দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়ে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের সবকটি সিনেমা হল। ফলে বিনোদন সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি। দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সর্বশেষ বন্ধ হয়ে যায় দেড়শো বছরের পুরনো মমতাজ সিনেমা হলটিও। ব্যবসা না থাকায় বন্ধ করে দেওয়া ৩৪টি সিনেমা হলের অধিকাংশই ছাত্রবাস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন মালিকরা। প্রান্তিক জনগণের বিনোদনের বৃহৎ এই মাধ্যমটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে দর্শকপ্রিয় সিনেমা নির্মাণের বিকল্প নেই বলে দাবি দর্শক, সংস্কৃতি কর্মী ও হল মালিকদের।
সরেজমিনে ঘুরে, সিনেমা হল মালিক ও সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকাতেই ছিল নিলা, লক্ষী, গোধুলি, মমতাজ ও মৌসুমি নামে ৫টি সিনেমা হল। এ ছাড়াও জেলার বেলকুচি উপজেলায় ১১টি, উল্লাপাড়ায় ৫টি, শাহজাদপুরে ৬টি, কাজিপুরে ৩টি, রায়গঞ্জে ২টিসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩৩ লাখ মানুষের বিনোদন চাহিদা পূরণে গড়ে উঠেছিল আরো অন্তত ২৯টি সিনেমা হল। কিন্তু বর্তমানে এসবই যেন গল্প। দর্শক না থাকায় লোকসানের শিকার হয়ে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে জেলা সদরের ৫টিসহ জেলার সকল সিনেমা হল।
সর্বশেষ করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অজুহাতে মমতাজ সিনেমা হলটিও বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া সিনেমা হলগুলো একদিকে যেমন বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপরদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ছে এর সঙ্গে জড়িতরা।
এক সময় সিরাজগঞ্জের সিনেমা হলগুলোর ভিড় সামলাতে হল মালিকদের দ্বারস্থ হতে হতো পুলিশ প্রশাসনের। কিন্তু মানসম্মত সিনেমা নির্মাণ না হওয়ায় দিন দিন দর্শকরা সিনেমা হল বিমুখ হয়েছে। বিনোদনের বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে ইউটিউব, মোবাইল বা টেলিভিশনে বিদেশি চ্যানেলগুলোকে। আর জনসাধারণের এই বিদেশি সংস্কৃতিমুখী হয়ে উঠায় বিনাশ ঘটছে দেশীয় সংস্কৃতির। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন রুখতে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বিনোদন চাহিদা পূরণে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো পুনরুজ্জীবিত করার বিকল্প নেই বলে অভিমত সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি আসাদ উদ্দিন পবলু বলেন, দর্শকপ্রিয় গল্পের সিনেমা নির্মাণ ও লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল মালিকদের প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা প্রদানের বিকল্প নেই। আমরা আশা করি আবারো সিনেমা হলগুলোকে দর্শকমুখর করে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
এদিকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলোকে নতুনভাবে সাজাতে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঝণ, প্রনোদনা প্রদান, বিদ্যুৎ বিল কমানো ও সুষ্ঠুধারার মানসম্মত সিনেমা নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন সিনেমা হল মালিকরা।
এ বিষয়ে মমতাজ সিনেমা হলের ব্যাবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়ত লোকসানের কারণে কর্মচারিদের বেতন বকেয়া, বিদুৎ বিল বকেয়া পরে যাওয়ায় মালিক হল বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা কর্মহীন হয়ে পরেছি। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি ভালোমানের সিনেমা নির্মাণ হলে আবারো হলটি চালু করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা কালচারাল অফিসার মাহমুদুল হাসান লালন বলেন, ভালো গল্প না থাকায় ভালো মানের সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না। একমাত্র ভালো গল্পের সিনেমাই পারবে দর্শকদের হলমুখী করতে, হারিয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে।
এসআইএইচ