নেত্রকোনায় ৪০ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পানির সংকটে
নেত্রকোনা সীমান্তবর্তী কলমাকান্দায় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে আদিবাসীদের বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি অথবা টিলার নিচে তৈরি অগভীর কূপের ময়লা পানিই তাদের ভরসা। উপজেলার লেংগুরা, খারনৈ ও রংছাতি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন বিশুদ্ধ পানির এ সংকটে পড়েছেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানায়, এলাকায় পানির গভীর নলকূপ না থাকার কারণে দেখা দিয়েছে এমন সংকট। তবে শুধু এবারের শুষ্ক মৌসুমেই নয়, প্রতিবারই শুষ্ক মৌসুমে এমন সংকট দেখা দেয় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে। এসব গ্রামের সচ্ছল পরিবারের লোকজন প্রয়োজন মতো একাধিক নলকূপ স্থাপন করে পানির সংকট মেটায়। কিন্তু দিন আনে দিন খায় এমন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
অনেক পাড়াতেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। এ কারণে অনেককে দূর থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। আবার বেশির ভাগ পরিবার ব্যবহার করছে কুয়া অথবা ছড়ার পানি।
কলমাকান্দা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা লেংগুরা ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বেশ কিছু গভীর কুয়া সরকারিভাবে তৈরি করে দিয়েছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, অধিকাংশ কুয়া নির্মাণের চার থেকে ছয় মাসের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে।
রংছাতি ইউনিয়নের চন্দ্রডিঙ্গা, পাচগাঁও, সন্নাসীপাড়া, জাকিরপাড়া, মনগড়া খারনৈ ইউনিয়নের ভাষাণকুড়া, কচুগড়া, বিশ্বনাথপুর, রানীগাও, খারনৈ, গোবিন্দপুর লেংগুরা ইউনিয়নের চেংগ্নী, গোপালবাড়ী, ফুলবাড়ী, কালাপানি, কাঠাবাড়ীসহ আরও বেশ কিছু গ্রামের লোকজন তাদের সংকটের কথা জানান।
তারা জানান, একসময় তারা ওপারের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ময়লাযুক্ত পানিই কাপড় দিয়ে ছেঁকে কোনো রকম পরিষ্কার করে পান করতেন। কিন্তু এখন ছড়াগুলোও শুকিয়ে খাঁ-খাঁ করছে।
এদিকে সচ্ছল পরিবারের লোকজন কয়েকটি বাড়িতে গভীর নলকূপ বসালেও মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের কারণে তা-ও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে অনেকে বাড়ি থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে ছড়ার পানি ছেঁকে আবার অনেকে কোনো রকম একটি কুয়া (ইদারা) তৈরি করে খাবার পানিসহ নিত্য ব্যহারের পানি সংগ্রহ করছেন।
খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পানির দুর্ভোগের বিষয়টি আমরা জানি। আসলে ওখানে প্রায় হাজার ফুট গভীর নলকূপ বসাতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাটির নিচ থেকে পাথর সরিয়ে যদিও বিকল্প হিসেবে গভীর কুয়া বসানো যায় তাতেও ৭০ হাজার থেকে লাখ টাকা ব্যয় হয়।
তিনি আরও বলেন, সরাসরি উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই কেবল দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই গ্রামগুলোতে পানির সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে।
কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ওই অঞ্চলগুলোতে পাথরের জন্য টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয় না। তবে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে বেশ কিছু রিংওয়েল বসানো হয়েছে। এখনো ১০টি রিংওয়েল বসানোর কাজ চলমান।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, আমি এ সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ব্যাপারে আমি আন্ততরিকভাবে চেষ্টা করব।
এসএন
আজকের সেহরির শেষ সময় (ঢাকা)
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড